Logo
Logo
×

জাতীয়

সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা নির্ধারণে কমিটি পুনঃগঠন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৬ পিএম

সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা নির্ধারণে কমিটি পুনঃগঠন

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে গঠিত কমিটি পুনঃগঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সদস্য সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানকে ঠিক রেখে কমিটি পুনঃগঠন করা হয়। 

এতে নতুন করে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম এবং সাবেক যুগ্ম সচিব কাওছার জহুরা বেগমকে সদস্য হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। 

মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করবে। এ লক্ষ্যে কমিটি কাজ শুরু করেছে। এর আগে গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার মূলত সেই কমিটিই পুনঃগঠন করা হয়।

মঙ্গলবার জারি করা আদেশে বলা হয়, কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য হলো, ছাত্রদের সুষ্ঠু ও বৈধ দাবিগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে কার্যকর সমাধানের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করতে হবে। দেশে বর্তমানে চাকরির বয়সসীমা ও আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করবে কমিটি। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও এর পেছনের কারণসমূহ বিশ্লেষণ করবে কমিটি। কোভিড-১৯ অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, অন্য উপাদানগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ করতে হবে। 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, শিক্ষাবিদ, চাকরি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ও স্পষ্ট মতামত গ্রহণ করা হবে। 

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য আইনগত ও প্রশাসনিক বাধাগুলো বিশেষণ করা হবে। প্রয়োজনীয় আইনি পরিবর্তন ও সংশোধনের জন্য সুপারিশ করবে কমিটি। বয়সসীমা বাড়ালে শ্রম বাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা বিশ্লেষণে উঠে আসবে। সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর সম্ভাব্য কি প্রভাব পড়তে পারে তারও বিশ্লেষণ করবে কমিটি। 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, প্রাসঙ্গিক তথ্য ও পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করে একটি সুস্পষ্ট প্রস্তাব তৈরি করবে কমিটি। সাত কর্মদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে হবে। 

জারি করা আদেশে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিটিকে একটি উপযুক্ত দপ্তর ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস প্রদান করা হবে। সুপিরিয়র সিকেশন বোর্ডের সদস্যগণ প্রতি সভার জন্য যেরূপ সম্মানি পেয়ে থাকেন কমিটির সদস্যরা একই খাত থেকে সমপরিমাণ সম্মানি পাবেন। 

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করে চাকরি প্রত্যাশীরা। সেখানে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চাকরিপ্রত্যাশীদের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন এ বিষয়ে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করছেন না। অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কথা রাখেননি। এখন আর কারও সঙ্গে কথা হবে না। সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব। 

প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রদের পক্ষের মানুষ। তার সঙ্গে সরাসরি কথা না বলে আমরা যাব না। এমন বাস্তবতায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নির্ধারণে সোমবার কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার জন্য ইতোপূর্বে দাবি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিববের কাছে আবেদন করেছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। আবেদনটি ১৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

বিএএসএ’র আবেদনে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স এর আগে যথাক্রমে ৩০ ও ৫৯ (মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের যথাক্রমে ৩২ ও ৬০) বছর করা হয়েছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান ৭২ দশমিক ৩ বছরে দাঁড়িয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর এবং সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৭ বছর। বিগত এবং বর্তমান সময়ে যেসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকের বয়স ৬৭ বছরের ঊর্ধ্বে।

এতে আরও বলা হয়, চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানদণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বিশ্বের ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে আবার এটি উন্মুক্ত। একই সঙ্গে অবসরের বয়সসীমা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ভেদে ৬৫ থেকে ৬৭ বছর এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭২ বছর। সরকারি চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের যাওয়ার বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে চাকরিপ্রত্যাশী এবং চাকরিরতদের পক্ষে আন্দোলন ও দাবি উত্থাপিত হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম