Logo
Logo
×

জাতীয়

যেসব সরকারপ্রধান আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের সাথে বৈঠক করেছেন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ এএম

যেসব সরকারপ্রধান আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের সাথে বৈঠক করেছেন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ (বামে), রোনাল্ড রেগান (মাঝে) এবং জিমি কার্টার (ডানে)।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে নিউইয়র্ক সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইড লাইনে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, যখন দুজন সরকার প্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেন সেটিকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হিসেব বর্ণনা করা হয়। সে হিসেবে গত ২৩ বছরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের মধ্যে কোন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়নি। 

সর্বশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেখা হয়েছিল।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, দিল্লিতে শেখ হাসিনার সাথে জো বাইডেনের 'পুল-অ্যাসাইড মিট' হয়েছিল, যেটাকে শুভেচ্ছাবিনিময় বলা যেতে পারে।

তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে হলে সেটির একটি স্ট্রাকচার থাকে। দুই সরকার প্রধান ছাড়াও উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। সেখানে কিছু আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়। 

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সরকার প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য হিস্টোরিয়ান-এর রেকর্ডে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ছয়জন সরকার প্রধান আমেরিকায় গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এই ছয়জনের মধ্যে জেনারেল এরশাদ দুইবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেছেন।

এর বাইরে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।

মুজিব-ফোর্ড বৈঠক

১৯৭৪ সালের ১লা অক্টোবর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেরার্ড ফোর্ড-এর সাথে।

সে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হোসেইন আলী।

প্রেসিডেন্ট ফোর্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠকটি ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। সে বৈঠকের অফিশিয়াল কথোপকথনের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে জেরার্ড ফোড প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরিতে।

জিয়া-কার্টার বৈঠক

১৯৮০ সালে জাতিসংঘ অধিবেশন শেষ করে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-এর অফিসিয়াল বাসভবন হোয়াইট হাউজে যান।

তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিমি কার্টার। সে সময় আমেরিকার নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কার্টার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে বৈঠক করেন হোয়াইট হাউজে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত 'দ্য আমেরিকান প্রেসিডেন্সি প্রজেক্ট' দেশটির প্রেসিডেন্টদের শসনামলের বিভিন্ন দলিলপত্র সংগ্রহ করে এবং সেগুলো তাদের ওয়েবসাইটে অবমুক্ত করে।

সেখানকার একটি দলিলে জিয়াউর রহমানের হোয়াইট হাউজ সফর এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পুরো অংশ তুলে ধরা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং জিমি কার্টারের মধ্যে আলোচ্য বিষয় ছিল বাংলাদেশের আমেরিকার সাহায্য নিয়ে। এর আগের বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৮৪ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল। সে বছর বাংলাদেশ ১.৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।

জিয়াউর রহমানের সাথে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট কার্টার বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন।

এরশাদ-রেগান বৈঠক

১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাসে জেনারেল এরশাদ হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে দেখা করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের সঙ্গে।

সে বৈঠকের পর রোনাল্ড রেগান ও জেনারেল এরশাদ একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে মি. রেগান বলেন, গত কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিরে আনার জন্য কাজ করছেন জেনারেল এরশাদ।

তিনি বলেন, জেনারেল এরশাদ তার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যেভাবে কাজ করছেন সেটি প্রশংসার দাবি রাখে। জেনারেল এরশাদ ব্যক্তি খাতের বিকাশে কাজ করছেন।

এরশাদ-বুশ বৈঠক

১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসের শুরুতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ আবারও বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (সিনিয়র) এর সঙ্গে।

জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে এইচ এম এরশাদের সাথে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের বৈঠকের বিস্তারিত ডকুমেন্ট অবমুক্ত করা হয়েছে।

সেসব কাগজপত্র থেকে জানা যায়, এরশাদ-বুশ বৈঠকে প্রায় পুরোটা জুড়েই তৎকালীন ইরাক ও কুয়েত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে নিয়ে আলোচনা হয়।

নিউইয়র্কের একটি হোটেলে ৪০ মিনিটের সে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জেনারেল এরশাদের সাথে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ,জাতিসংঘে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আতাউল করিম।

খালেদা-বুশ বৈঠক

১৯৯২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সাথে। হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে প্রায় একঘণ্টা যাবত সে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

হোয়াইট হাউজের তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি সে বৈঠকে সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কথা বলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ইরাক যুদ্ধ এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে।

কুয়েতে ইরাকি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যে ভূমিকা রেখেছে সেটির প্রশংসা করেন বুশ।

সে সময় মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। প্রেসিডেন্ট বুশ এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এই ঘটনার নিন্দা জানান।

হাসিনা-ক্লিনটন বৈঠক

২০০০ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের দুইবার বৈঠক হয়েছে। ২০০০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা সফরে আসেন বিল ক্লিনটন।

ক্লিনটন ছিলেন একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এর আগে কিংবা পরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেননি।

এর সাত মাস পরে শেখ হাসিনা হোয়াইট হাউজে গিয়ে ক্লিনটনের সাথে বৈঠক করেন।

ক্লিনটন ঢাকা সফরের সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথেও বৈঠক করেন।

২০০০ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাথে।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন সফর করেন।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য এসব সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম