Logo
Logo
×

জাতীয়

বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম

বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক

যানজট রাজধানীর নিত্যদিনের চিত্র হলেও সোমবারের অসহনীয় যানজটে নাকাল হয়েছে রাজধানীবাসী। যানজটের প্রতিদিনের অনুষঙ্গের সঙ্গে যোগ হয় গুলশান দুই নম্বর গোল চত্বরে বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের অবরোধ। উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে যেতে সহযোগিতাকারী বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ প্রতারণার অভিযোগে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী হাজারখানেক শিক্ষার্থী। তাদের বিক্ষোভ ও কয়েক ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। একইসঙ্গে এর জেরে আশপাশের বনানী, বাড্ডা, রামপুরা, গুলশান-১, হাতিরঝিলসহ সংলগ্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যখন-তখন অবরোধ ও পরিবহণের বেপরোয়া চলাচলে রাজধানীতে যানজট বেড়েছে। এছাড়া সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দুর্বলতার কারণেও যানজট বাড়ছে বলে অভিযোগ তাদের। 

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সড়কে দিনের বেলায়ও চলছে দূরপাল্লার বাস। রাস্তায় দেদার চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। তার ওপর সড়কের খানাখন্দের কারণেও তৈরি হচ্ছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ থেকেও নেই বলা চলে। অবশ্য আগের মতো ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশ মানছেও না নগরবাসী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাফিক পুলিশকে কিছুটা কঠোর হতে দেখা গেছে। কুড়িল-প্রগতি সরণি, নতুনবাজার-বাড্ডা সড়কের যানজট মাত্রা ছাড়িয়েছে। এখানে চলছে পাতাল রেলের কাজ। ফলে বেশ কিছুদিন যাবতই এই সড়কে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

অফিস ছুটি হয় বিকালে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চললেও মোড়ে মোড়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে যানবাহন। রাত পেরিয়ে সকাল। পরদিন আবারও কাজে বেরিয়ে আবারও সেই যানজট। শ্যামলী থেকে রওনা দিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী ওমর ফারুক। বিজয় সরণি আসতেই চলে গেছে তার দেড় ঘণ্টা। এমন অনেকেই আছেন হুট করে যানজট বেড়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তাজুড়ে দিনের বেলাতেও চলছে দূরপাল­ার বাস। মূল রাস্তায় দেদার উঠে পড়ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। প্রতি মোড়ে মোড়ে সংযোগ সড়কের মুখগুলো আটকে পড়ছে এ রিকশার কারণে। রাস্তার মাঝেও যেখানে সেখানে ঘুরছে রিকশা, আটকে পড়ছে অন্য যানবাহন।

আরও দেখা গেছে, যাচ্ছেতাই চলায় ঘটছে দুর্ঘটনা। তাৎক্ষণিক লেগে যাচ্ছে বাকবিতণ্ডা। সমাধান করার যেন কেউ নেই। এ ঘটনাগুলো আগে সমাধান করে রাস্তা চালু রাখত পুলিশ। রাস্তায় কোনো কোনো পয়েন্টে দেখা যাচ্ছে পুলিশ, তবে তাদের নির্দেশ কেউ মানছে না। যেখানে দাঁড়াতে মানা, পুলিশের সামনেই সেখানে দাঁড়াচ্ছে বাস। কুড়িল-প্রগতি সরণি সড়কে মেট্রোরেলের কাজ চলায় ওই সড়কের যানজটের মাত্রা কয়েকগুণ বেশি।

অনেকে বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করেছেন শিক্ষার্থীরা; তখন নগরীর যানজট স্বাভাবিক ছিল। তাহলে ট্রাফিক পুলিশ পারছে না কেন। অবশ্য সে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সড়কে গাড়ির চাপও কম ছিল বলে অনেকের অভিমত। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুন নূর বলেন, পুলিশের ভীতির আসলে কোনো কারণ নেই। তুবও তারা কেন ভয় পাচ্ছেন তা বুঝতে পারছি না। 

গুলশানে বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ : বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ প্রতারণার অভিযোগে সোমবার বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী হাজারখানেক শিক্ষার্থী। এ সময় প্র্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। সোমবার দুপুর থেকে রাজধানীর গুলশান দুই নম্বর গোল চত্বর অবরোধ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানটির সামনে বিক্ষোভ করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। গুলশানের আশপাশের সড়কেও দেখা দেয় তীব্র যানজট। টানা পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে সড়ক খালি করা হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক মারপিট করেছে তাদের। 

আন্দোলনকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পল­ব হাসান যুগান্তরকে বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ২০২৩ সালে বিএসবি গ্লোবালকে ২৭ লাখ টাকা দেন তিনি। কিন্তু ভিসা পাননি। টাকাও ঠিক মতো ফেরত দেয়নি। এখনো পাঁচ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, এমন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিএসবি। সোমবার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের গুলশান অফিসের কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করেনি। প্রথমে মানববন্ধন ও পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের ভাড়া করা মাস্তানরা তাদের বেধড়ক পিটিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাশেই অবস্থান করছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রিয়াজুল হক যুগান্তরকে বলেন, সড়ক অবরোধ করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। আমরা বারবার আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করেছি সড়ক ছেড়ে দিতে। তাদের পাঁচজনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমরা বৈঠকও করেছি। তাদের বলেছি টাকা আদায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই তাদের প্রতিনিধি দলের অনুরোধ শোনেননি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখার পর আমরা সড়ক খালি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় তাদের নিজেদের মধ্যেই বিরোধ লাগে। কে কাকে মেরেছে তা বোঝা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে দুই ভাগ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। 

এদিকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের হিসাব শাখার কর্মকর্তা হাসনাত সোহেল যুগান্তরকে বলেন, করোনার আগে ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য ১০০ জন ছাত্র আবেদন করলে অন্তত ৮০ জন ভিসা পেতেন। এখন ৫০ জনও পান না। ফলে এ জটিলতা দেখা দিয়েছে। 

উলে­খ্য, এর আগেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান বাশারের স্ত্রী ও এর ভাইস-চেয়ারম্যান খন্দকার সেলিনা রওশন, জিএম আবু জাহিদ ও ক্যাশিয়ার মাহবুব হোসেনকে গুলশান থানা এলাকায় কর্তব্যরত সেনা কর্মকর্তাদের কাছে সোপর্দ করেন। একই সঙ্গে শিগগিরই তারা প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা ফেরত দেওয়ার আলটিমেটাম দেন। প্রতারণার শিকার ছাত্রদের দাবি, গত দুই বছর ধরে কানাডায় পাঠানোর কথা বলে টাকা জমা নিয়েছে বিএসবি গ্লোবাল। তারা কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা জমা নেয়। অনেকে তার পরিবারের সদস্যদের জন্যও টাকা জমা দিয়েছেন। কেউ ১২ লাখ, কেউ ১৫ লাখ টাকাও দিয়েছেন। তারা সবাই এখন বিপাকে পড়েছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম