Logo
Logo
×

জাতীয়

বিশ্ব ফুসফুস দিবস উপলক্ষ্যে যুগান্তর-ইনসেপ্টা গোলটেবিল বৈঠক

চিকিৎসা ব্যয় কমাতে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির তাগিদ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম

চিকিৎসা ব্যয় কমাতে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির তাগিদ

ছবি: যুগান্তর

বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে বাড়ছে বক্ষব্যধিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শ্বাসকষ্ট, হাঁচি-কাশি, বুকে ব্যথা, জ্বরসহ নানা উপসর্গ নিয়ে প্রায় প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মরণব্যাধি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পারায় জীবনের মায়া ছেড়ে চিকিৎসা থেকে দূরে যাচ্ছেন কেউ কেউ। এ অবস্থায় ফুসফুসজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি বাজেট বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, বক্ষব্যাধিতে যক্ষ্মা এবং ফুসফুসের ক্যানসার দুটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। যথাযথভাবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে য²া ওষুধে সুস্থ হয়। কিন্তু কখনো কখনো যক্ষ্মায় ফুসফুসের ভেতরের ক্যাভিটি বা গর্ত তৈরি হয়। এটা জটিলতা তৈরি করলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এছাড়া এমডিআর টিবি বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় ওষুধে নির্মূল করা না গেলে এবং কাশির সঙ্গে রক্তপাত হলেও অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। ফুসফুসের ক্যানসারের রোগীদের ক্ষেত্রেও সার্জারির দরকার হয়।

বিশ্ব ফুসফুস দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে সোমবার দুপুরে চ্যানেল আই কার্যালয়ে যুগান্তর ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘বিশুদ্ধ বায়ু ও সুস্থ ফুসফুস সবার জন্য’।

বৈঠকে আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ (নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ) অধ্যাপক ডা. মো. মাজহারুল শাহীন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাকি মো. জাকিউল আলম, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. মো. আলী হোসেন, থোরাসিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল আনাম কিবরিয়া, সাবেক সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননূর, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুস শাকুর খান, সহকারী অধ্যাপক ডা. গোলাম সারওয়ার, সহাকারী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ, এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুগান্তরের স্বাস্থ্য পাতার সম্পাদক ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) শফিকুজ্জামান। গোলটেবিল বৈঠকটি পরিচালনা করেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহাকারী অধ্যাপক ডা. জিয়াউল করিম। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ বলেন, একজন ফুসফুস রোগে আক্রান্ত রোগীকে ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে। এমন কর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না, যেখানে ফুসফুসে সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, আমাদের এখানে পাথরকাটা, পাথর ভাঙা, জাহাজ ভাঙা, বিভিন্ন মিলকারখানাসহ এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা যাবে না। এগুলো একজন ফুসফুস সমস্যায় আক্রান্ত রোগীকে মেনে চলতে হবে। 

অ্যালার্জিজনিত ফুসফুসের সমস্যা সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. মো. মাজহারুল শাহীন বলেন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এমন কিছু কণা বা জিনিস যখন মানুষের সংস্পর্শে আসে, তখন শরীরে কিছু প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, এটাকেই অ্যালার্জি বলা হয়। এক্ষেত্রে শরীরের বেশকিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন: বাসস্থানের হাউজ ডাস্ট, ম্যাটস, ধুলা, গৃহপালিত প্রাণীর সংস্পর্শ বা লোম ও লালা। ঘরের বাইরের ধুলা, ধোঁয়া ও পরিবেশের বিশেষ কোনো জিনিস। এছাড়া বিশেষ খাবার, পরিবেশ এবং ধূমপায়ীদের সিগারেটের নিকোটিনেও অ্যালার্জি হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিষ্কার বায়ু এবং স্বাস্থ্যকর ফুসফুস একজন মানুষকে সুস্থ রাখতে পারে। বাসস্থানের ভেতর ও বাইরে বায়ুদূষণ রোধ করে এটা সম্ভব। কিন্তু গত কয়েক বছর বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। বায়ুদূষণে ফসফুসের সমস্যা সিওপিডি নিয়ে অসংখ্য রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আসছে। বায়ুদূষণ থেকে ফুসফুসকে রক্ষায় ঘরের কার্পেটসহ ধুলাবালু জমে এমন জিনিস না রাখা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত টিকা নিতে হবে। 

অধ্যাপক ডা. সাকি মো. জাকিউল আলম বলেন, ফুসফুসের চিকিৎসায় রোগ নির্ণয় ও ট্রিটমেন্ট দুটি বিষয়কে আলাদা করতে চাই। দেশের হাসপাতালে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি, তিন ধরনের প্রতিষ্ঠানে সেবা দেওয়া হয়। প্রাইমারি পর্যায়ে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ও কমিউনটি ক্লিনিকে কনসালটেন্টরা নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, সিওপিডি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা, কমন কোল্ডের সাধারণ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সেকেন্ডারি পর্যায়ে বিভিন্ন জেলায় ৪২টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে জিন এক্সপার্ট মেশিনের সহায়তায় আউট পেশেন্ট রোগীদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর টারশিয়ারির অন্তর্ভুক্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বিভাগীয় হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয়।

অধ্যাপক ডা. মো. আলী হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী দিনদিন বায়ুদূষণ বাড়ছে। বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ অবস্থান থেকে বেড়িয়ে আসতে সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বাতাস যেন দূষিত না হয়, সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। 

অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল আনাম কিবরিয়া বলেন, বক্ষব্যাধিতে যক্ষ্মা এবং ফুসফুসের ক্যানসার দুটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। যথাযথভাবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে যক্ষ্মা ওষুধে সুস্থ হয়। কিন্তু কখনো কখনো যক্ষ্মায় ফুসফুসের ভেতরের ক্যাভিটি বা গর্ত তৈরি হয়। এটি জটিলতা তৈরি করলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। এছাড়া এমডিআর টিবি বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় ওষুধে নির্মূল করা না গেলে এবং কাশির সঙ্গে রক্তপাত হলেও অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। ফুসফুসের ক্যানসারের রোগীদের ক্ষেত্রেও সার্জারির দরকার পড়ে। 

সাবেক সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননূর বলেন, ফুসফুস দিবসে ফুসফুসসংক্রান্ত রোগ সম্পর্কে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা, চিকিৎসা সেবার নিশ্চিত করা এবং ফুসফুসের রোগ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাই প্রধান কাজ। একই সঙ্গে ফুসফুস সমস্যার চিকিৎসা সেবা যেন দেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া। তাই বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশও ফুসফুস দিবস পালন করে। 

সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল বলেন, আমাদের বায়ুতে অক্সিজেন আছে। এ অক্সিজেন আমরা ফুসফুসের মাধ্যমে গ্রহণ করি এবং শ্বাস-নিশ্বাস নিয়ে সুস্থ জীবনধারণ করি। তাই ফুসফুস গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু এ অক্সিজেন যদি দূষিত হয়, তাহলে ফুসফুসে অনেক ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। ফুসফুসে অ্যাজমা, ক্যানসার একিউট ব্রংকাইটিস। এছাড়াও ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়ার কারণে নিউমোনিয়া হয়। 

সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুস শাকুর খান বলেন, অর্থনীতিতে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। সেই কারণে সবার কাছে সমান চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এখানে আমাদের বাজেট নিয়ে প্রশ্ন আছে? বাজেটের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন আছে? আমাদের লোকসংখ্যায় ব্যাপক সমস্যা আছে। সেখানেই আমরা বেশি পিছিয়ে আছি। এ কারণেই আমাদের দেশে বায়ুদূষণজনিত সমস্যাগুলো বেড়ে চলছে। 

ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের শরীরে সব অঙ্গ সচল রাখতে প্রয়োজন অক্সিজেন। এ অক্সিজেন সাপ্লাই দেয় ফুসফুস। কিন্তু আমাদের শ্বাসনালির ক্ষতির প্রধান কারণ ধূমপান। বায়ুদুষণের কারণেও মানুষের শ্বাসনালির সমস্যার হচ্ছে। এ সমস্যা কমিয়ে আনতে সচেতনতার বিকল্প নেই। 

সহকারী অধ্যাপক ডা. গোলাম সারওয়ার বলেন, কাশির সঙ্গে কফ বের হওয়া, রক্ত পড়া, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শ্বাস নিতে শব্দ হওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়া, জ্বর থাকা, ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে বুঝতে হবে ফুসফুসে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। 

ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ফুসফুসের সমস্যায় পারিবারিক প্রভাব থাকে। মাঝেমধ্যেই এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হই। যেমন একজনের অ্যাজমা আছে, তারা শঙ্কায় থাকে, তাদের ছেলে-মেয়েদের অ্যাজমা হতে পারে। একটা পরিবারের যদি একজন অ্যাজমা রোগী থাকে, তাহলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

যুগান্তরের স্বাস্থ্য পাতার সম্পাদক ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম বলেন, যুগান্তর ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে গুরুত্ব দেয়। প্রতি শনিবার পূর্ণ এক পাতায় চিকিৎসকদের লেখা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় নিয়মিত ছাপা হয়। আজকের গোলটেবিল আলোচনার মূল বিষয় যক্ষ্মা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়। আলোচকরা সেটির ওপর বিশদ আলোকপাত করছেন। 

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ওষুধশিল্পে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। এখন অনেক দেশ আমাদের ওষুধ কিনছে। বাংলাদেশে হৃদরোগ রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে না। আমাদের তৈরি ওষুধও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে ২০০১ ও ২০০২ সালের দিকে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস প্রথম ফুসফুসের রোগীদের মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ওষুধ বাজারে আনে। বর্তমানে ফুসফুসের রোগের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওষুধ এটি।

অনুষ্ঠানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) শফিকুজ্জামান সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম