টেলিটকের দুর্নীতিগ্ৰস্ত প্রশাসন সংস্কারের দাবি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১০ পিএম

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক মোবাইল ফোন অপারেটরের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন সংস্কার ও সারা দেশের টেলিটক ডিলারদের ন্যায্য পাওনা আদায় করে টেলিটক-কে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান টেলিটক ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ।
ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদদের স্মরণ করে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, ‘টেলিটক আমাদের ফোন’ এই স্লোগান কে বুকে ধারণ করে আমরা সকল ডিলাররা টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে মনে প্রাণে ভালোবাসি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটককে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে বর্তমান সেলস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজমেন্ট টেলিটককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছেন।’
নেতারা বলেন, এই গ্রুপের একমাত্র কাজ হল টেলিটককে একটি লস প্রজেক্ট হিসাবে দাঁড় করিয়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করে বড় আকারের কমিশন বাণিজ্য করা। এরই ধারাবাহিকতায় মার্কেটে সিমের চাহিদা থাকলেও চাহিদা মোতাবেক সিম ডিলারদের কাছে দেওয়া হয় না। রিটেলারদের টেলি চার্জে পল্লী বিদ্যুৎ সেল করার জন্য টেলি-পে অ্যাপ সামান্য অজুহাতে মাঝে মাঝে বন্ধ করে দেয়া হয়। সিম এক্টিভেশন এবং প্রথম রিচার্জ করতে মিনিমাম ২০ মিনিট সময় লাগে। যাতে রিটেইলার টেলিটকের সিম বিক্রয় করতে অনীহা প্রকাশ করে। টেলিটকের টাওয়ারে ব্যাটারি ব্যাকআপের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই নেটওয়ার্কও চলে যায়।
তারা বলেন, আমাদের মাসিক এস আর, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ কম্পেনসেশন জানুয়ারি ২০২২ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে। টেলিটক প্রথমে প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে জামানতস্বরূপ এক লাখ টাকা করে দেয় এবং পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ টেলিচার্জ বাবদ সারা বাংলাদেশের ডিলারগণের কাছ থেকে ২০১৯ সালে ডিলার প্রতি ৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট নেয় কিন্তু বছরখানেক পর কিছু অসাধু কর্মকর্তা পল্লীবিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওয়ার বাই টেলিটক হিসেবে চুক্তি করে। যাহাতে ডিলারগণের বিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা কমতে শুরু করে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসে। তাদের এই কর্মকান্ড দেখে আমরা টেলিটককে বাঁচিয়ে রাখতে এবং মার্কেটকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে কয়েকবার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করি। কিন্তু তারা আমাদের বিষয়গুলো আমলে নেয়নি। অনেক ডিলার তাদের স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করতে না পেরে বাবসা ছেড়ে চলে গেছেন বা অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় অনেক ডিলারের সাথে এই ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। টেলিটক থেকে অব্যাহতি দেওয়া ডিলারগনের জামা কৃত জামানতের টাকা, বকেয়া কমপেনসেশন, বিভিন্ন সময়ের পাওনাসহ সিম কমিশন এর টাকা চাওয়া হলে টেলিটক ম্যানেজমেন্ট অব্যাহতি দেওয়া ডিলারদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। আমরা সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্টের ২১ এবং সেপ্টেম্বর ১০ তারিখে টেলিটকের এমডি ও জিএমের সাথে আমাদের দাবি নিয়ে মিটিং করা হলে তিনি কোন আশানুরূপ সমাধান দিতে পারেননি। তাই ডিলাররা বাধ্য হয়ে আমাদের সমুদয় পাওনাদি এবং টেলিটককে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে আমাদের মূল দাবি এবং সংস্কার মূলক দাবি উপস্থাপন করেন। দাবি সমূহ হলো- ২০০৯ সালের স্মারকের আলোকে ডিলার হাউজের এসআর, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ কম্পেনসেশন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের চলতি মাস পর্যন্ত সকল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। যা আনুমানিক ১০ কোটি টাকা।
২. প্রত্যেক ডিলার হতে দেওয়া পল্লী বিদ্যুৎ, টেলিচার্জ বাবদ অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। যা আনুমানিক ৭৫ কোটি টাকা।
৩. ডিলার এবং রিটেলারদের পাওনা কৃত শতবর্ষ, বর্ণমালা স্বাগতম এবং অপরাজিতা প্যাকেজের ইউজেস কমিশন অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে এবং অপরাজিতা প্যাকেজের এসএএফ কমিশন প্রদান করতে হবে
৪.টেলিটক হতে অব্যাহতি দেওয়া সকল ডিলারদের সিকিউরিটি ডিপোজিটসহ সকল পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
৫. কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কমপেনসেশন দেওয়ার পূর্বেই ৩০% টাকা অগ্রিম নিয়ে কম্পেনসেশন দেওয়া হত। উক্ত ৩০% টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।
এ সময় তারা ৯ দফা সংস্কার মুলক দাবি জানান।
১. বিগত সরকারের আশীর্বাদ পুষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংস্কার করতে হবে এবং বাংলাদেশ টেলিকমিনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কর্মকর্তাদের টেলিটকে নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. মার্কেটে চাহিদা মোতাবেক সিম প্রদান করতে হবে এবং নতুন প্যাকেজের সিম আনতে হবে।
৩. টেলি পে অ্যাপস আপগ্রেড করতে হবে এবং অ্যাপসের যে কোন সমস্যার সমাধান দ্রুততম সময়ে করতে হবে এবং সিম এক্টিভেশন আপগ্রেড করতে হবে।
৪. সকল টাওয়ারে ব্যাটারি ব্যাকআপ এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. রিটেলারদের বিভিন্ন অফার সেলে এক্সট্রা কমিশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. মাদার সিম থেকে এস আর সিমে টাকা ট্রান্সফার করার পর অবিকৃত টাকা মাদার সিমে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে
হবে।
৭. রিটেলারদের কে এমএনপি করার সুযোগ দিতে হবে এবং প্রত্যেকটার জন্য কমিশন প্রদান করতে হবে।
৮. দ্রুততম সময়ে সকল টুজি টাওয়ারকে ফোরজিতে রূপান্তর করতে হবে।
৯. ডাটা ব্যবহারের জন্য স্পেশাল স্টুডেন্ট সিম প্যাকেজ আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় বক্তৃতা করেন টেলিটক ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক মো. রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর, মো. তোফায়েল হোসেন তপ, মো. নুরুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান রাজু প্রমুখ।