ঠিকাদারের অস্থায়ী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দূরভিসন্ধিমূলক: পবিস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
ফাইল ছবি
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঠিকাদারের অস্থায়ী জনবলকে সিস্টেম পরিচালনা ও উপকেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের আয়োজনকে অপরিণামদর্শী ও দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের সংস্কারসহ অন্যান্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলেও এতে সহযোগিতা না করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড টালবাহানা করছে বলেও অভিযোগ বৈষম্য বিরোধী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ করা হয়।
এতে বলা হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড একটি অফিস আদেশ জারি করেন যার স্মারক নং ২৫৩। এতে বলা হয়েছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঠিকাদার/উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানের জনবলকে উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উপকেন্দ্রের পরিচিত করণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।
যা একটি বাস্তবতা বিবর্জিত ও অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, ঠিকাদারের জনবল সাধারণত লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ করে থাকেন। উপকেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজের ঠিকাদার আলাদা এবং অভিজ্ঞ জনবল। সমিতিতে বর্তমানে চুক্তিবদ্ধ কোনো উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান নেই। এমনকি বিগত ৪৭ বছরেও উপকেন্দ্রে এই ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করার কোনো নজিরও নেই।
এছাড়া ঠিকাদারের শ্রমিকরা যেমন সমিতির নিয়মিত বা চুক্তিভিত্তিক জনবল নয়, তেমনি ঠিকাদারেরও নিয়মিত বা চুক্তিভিত্তিক জনবল নয়। ঠিকাদাররা যখন যাকে পান তাকে দিয়েই কাজ করান। এমনকি এই জনবলের সঙ্গে কাজের বিষয়ে আরইবি বা পবিসের কোনো চুক্তি বা অনুমতিপত্রও নেই। ফলে সিস্টেমের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
এভাবে বিচ্ছিন্ন জনবলকে সরকারের কেপিআইভূক্ত স্পর্শকাতর একটা সিস্টেম পরিচালনা করার প্রশিক্ষণ দিলে যেকোনো মুহুর্তে বিদ্যুৎ খাতে অস্থিতীশলতা ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদারের জনবলকে সাবস্টেশন অপারেশনের প্রশিক্ষণ দিলে ভবিষ্যতে যদি কোনো বিক্ষুদ্ধ জনতার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটে তখন তারা সাবস্টেশনে প্রবেশ করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটানোর আশংকা অমূলক নয়। তখন এই দায় কে নেবে?
বিজ্ঞপ্তিতে পবিস কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, এই একটি সিদ্ধান্তে বোঝা যায় বিআরইবি কতটা বাস্তবতা বিবর্জিত, অদক্ষ এবং অদূরদর্শী প্রতিষ্ঠান। আরইবির কর্মকর্তাদের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় এমন হঠকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান।
বিজ্ঞপ্তিতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, সারাদেশে বর্তমানে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। মাঠ পর্যায়ে সরাসরি গ্রাহক সেবায় নিয়োজিত নয় বিধায় বিআরইবি লোড বরাদ্দের বিষয়ে উদাসীন। লোডশেডিং এর ফলে ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত সমিতির বিভিন্ন অফিসে বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এমনিতেই জীবনশঙ্কা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করে গ্রাহক সেবা দিচ্ছেন, তদুপরি এই সংকটকালীন সময়ে সাবস্টেশনে প্রশিক্ষণ আয়োজন করে কৃত্রিমভাবে ফোর্সশেড করলে গ্রাহক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করবে এবং যেকোন মুহূর্তে অপ্রীতিকর ঘটনার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এমতাবস্থায় আরইবি কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে জনস্বার্থবিরোধী দপ্তরাদেশ চাপিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস বলেই প্রতীয়মান হয়। গ্রাহক সেবার স্বার্থে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সব অফিস এবং উপকেন্দ্রসমূহে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান তারা। ফলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্ম পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হওয়াসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহক সেবায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে তার দায় দায়িত্ব আরইবির ওপর বর্তাবে বলেও হুঁশিয়ারি করা হয়।
এমতাবস্থায়, দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় বিদ্যমান সব বৈষম্য অতি দ্রুত নিরসনের মাধ্যমে সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গঠিত রিফর্ম কমিটির সুপারিশমালা প্রস্তুত এবং বাপবিবো কর্তৃক সব চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করণের মাধ্যমে ২ দফা দাবি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব জরুরি বলে মনে করছি। অন্যথায় পরিস্থিতির শিকার হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে পূর্বাপেক্ষা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন পবিস কর্মকর্তা কর্মচারীরা।