শিগগিরই দেশে ফিরছেন আরব আমিরাতে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম
ফাইল ছবি
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ জন বাংলাদেশির সবাইকে এক সপ্তাহের মধ্যেই মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ করা আইনজীবী ওলোরা আফরিন মঙ্গলবার বিকালে বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দিতে দেশটির আদালত ইতোমধ্যেই আদেশ জারি করেছেন।
১১ জেলাতে বন্যায় কত জনের মৃত্যু হয়েছে, জানাল দুর্যোগ মন্ত্রণালয়
আইনজীবী ওলোরা আফরিন বলেন, আমরা আগেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। আজকে কোর্টে একই আদেশে তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কাজেই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই উনাদের বের করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে আমরা আশা করছি। হয়তো দু-একদিন কম-বেশি হতে পারে।
সকালে কারাগারে বন্দি ওই ৫৭ জন বাংলাদেশির সবার সাজা মওকুফ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
বিষয়টি দুপুরে সাংবাদিকদের জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূস বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আজ দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ক্ষমা করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করায় গত ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট নাহিয়ান। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের মুক্তি দিতে তখন অনুরোধ জানিয়েছিলেন ড. ইউনূস।
এক সপ্তাহের মাথায় সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা আসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এছাড়া অন্য দেশে গিয়ে বাংলাদেশিরা যেন আইন ভঙ্গ না করেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ক্ষমা পেলেও ওই বাংলাদেশিদের কেউই আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকতে পারবেন না বলে দুবাইভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সেই কারণে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইউএই সরকার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগারে বন্দি ৫৭ জন বাংলাদেশির সবার সব তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ওলোরা আফরিন।
আইনজীবী জানান, আবুধাবি, দুবাই, শারজাহসহ বিভিন্ন শহর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্তদের ৪২ জনের তালিকা পেয়েছি। তথ্যগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৫ জনের নাম, ঠিকানা, কর্মস্থল ও পরিবার-পরিজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, তবে এখন যেহেতু মুক্তি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে বের করা যাবে, সমস্যা হবে না।
যে কারণে তাদের জেল হয়েছিল
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী, দেশটিতে বিক্ষোভ করা অবৈধ। মূলত সেই কারণে গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ৫৭ জনকে আটক করে দেশটির পুলিশ।
ইউএইর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এমিরেটস নিউজ এজেন্সি (ওয়াম) তখন জানিয়েছিল, আটক বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তারা বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন রাস্তায় বড় আকারের মিছিল সংঘটিত করেছিল। ফলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সেই সঙ্গে আইন প্রয়োগের কাজে বাধা এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগও তোলা হয়।
আটক হওয়া ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আইন ভঙের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ৫৩ জনকে দশ বছর করে এবং একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ ঘোষণা করেন বিচারক।