দাড়ি-টুপিওয়ালা কর্মকর্তাদের সহ্য করতে পারতেন না ডিএমপির হাবিব
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম
সদ্য বিদায়ি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান
পদ্মার এপার-ওপার পৃথক্করণের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে গোটা পুলিশবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙেছেন সদ্য বিদায়ি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ মেরূকরণের সদস্য শতাধিক কর্মকর্তা আঙুল ফুলে গলাগাছ বনে গেছেন। তাদের কপাল পুড়ছে শেখ হাসিনার পতনের পর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সদ্য বিদায়ি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সামনে যেতে পারতেন না দাড়িওয়ালা, টুপি পরা কোনো কর্মকর্তা। হাবিবের এ কাজে উপযাজক হিসাবে যোগ দেন ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান (রংপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার হিসাবে চাকরিচ্যুত)।
তিনি অ্যাডিশনাল ডিআইজি (গোপনীয়) থাকাকালে সারা দেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজাকার, বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দেওয়ার কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেন। সারা দিনের এসব কাজের ফিরিস্তি তিনি হাবিবকে সশরীরে জানিয়ে আসতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদকে তার নির্দেশে গুলি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার এসপি হিসাবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন হাবিবুর রহমান। ঢাকা জেলায় প্রয়োজনীয় পুলিশ কনস্টেবল প্রার্থী পাওয়া না গেলে গোপালগঞ্জ জেলার প্রার্থীদের ধামরাই এলাকায় ১/২ শতক জায়গা কিনে তাদের ঢাকা জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দিয়ে গেছেন হাবিবুর রহমান।
ঢাকা জেলায় এ অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন তৎকালীন এসপি মিজানুর রহমান (ডিআইজি মিজান)। মিজানুর বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাভোগ করছেন। ১৫ বছরে ঢাকা জেলায় চাকরি পাওয়া অধিকাংশ কনস্টেবল গোপালগঞ্জ বা ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। ঢাকা জেলার এসপি হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসাবে হাবিবুর রহমান যোগ দেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ সিন্ডিকেটের শুরু ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭তম বিসিএসের মাধ্যমে। ওই সময় সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে যোগ দেন সদ্য চাকরিচ্যুত ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এর আগে তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে অফিস সহকারী হিসাবে চাকরি করতেন।
সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে চাকরিকালে ভোলার লালমোহনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণের দায়ে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। পরবর্তী সময়ে চাকরি ফিরে পাওয়ার পর শুরু হয় তার সিন্ডিকেট বাণিজ্য। ডিএমপিতে এডিসি (সদর) হিসাবে প্রথমে বেছে নেন ২০তম ব্যাচের জেসমিন বেগমকে। পদায়ন ও পদোন্নতিতে অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব নিলেন জেসমিন বেগম।
১২শ এএসআই পদোন্নতির সময় হাবিব ডিসি হেডকোয়ার্টার হিসাবে ৫০ কোটি টাকার অধিক অর্থ সংগ্রহ করে লাইমলাইটে আসেন। এরপর এডিসি হেডকোয়ার্টার হিসাবে দায়িত্ব নেন ২২তম বিসিএসের অ্যাডিশনাল এসপি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। জায়েদুলকে ব্যবহার করে হাবিব পদ্মার দুই পারের লোকজনকে আলাদা করতে থাকেন।
বাংলাদেশ পুলিশে আঞ্চলিকতার শুরু করেন হাবিব। ঢাকার পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদানের পর তিনি আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে জেসমিনকে সেট করেন। ডিএমপিতে অ্যাডিশনাল এসপি আরএম ফয়েজুর রহমানকে। বিভিন্ন জেলায় তার নিজের লোক বসান।
২৭তম ব্যাচের মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন (ডিসি, ওয়ারী), রাসেল শেখ (এসপি, কিশোরগঞ্জ), ২২তম ব্যাচের আবিদা সুলতানাকে নিয়োগ করেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পুলিশের ভূমিকাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজে। এরই মধ্যে তিনি উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠনের যাত্রা শুরু করেন। পুলিশের পদায়ন, পদোন্নতির বিনিময়ে সংগৃহীত অর্থ উত্তরণ ফাউন্ডেশনে জমা হতে শুরু হলো। বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপাররা পদায়নের জন্য উত্তরণ ফাউন্ডেশনে নজরানা দিয়ে জেলায় গিয়েছেন। যতদিন পুলিশ সুপার জেলায় থাকবেন, ততদিন নিয়মিত অর্থ দিয়ে যেতে হয়েছে উত্তরণ ফাউন্ডেশনে।