Logo
Logo
×

জাতীয়

একসময় থাকতেন টিনশেড বাসায় ভাড়া

হবিগঞ্জের জাহিরের সম্পদের পাহাড়

Icon

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, হবিগঞ্জ

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

হবিগঞ্জের জাহিরের সম্পদের পাহাড়

থাকতেন একটি টিনশেড বাসায় ভাড়া। পেশায় ছিলেন আয়কর উপদেষ্টা (আয়কর আইনজীবী)। রাজনীতিতে সর্বদা সক্রিয় থাকায় পেশায় মনোযোগী হতে পারেননি। আয়ও তেমন ছিল না। কখনো কখনো বাসা ভাড়া দিতেও হিমশিম খেতেন। অথচ এখন কি নেই তার। বিলাসবহুল ছয় তলা বাড়ি, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়িভরা স্বর্ণ, শহরে কয়েকটি বাড়ি। সরকারি, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি, জমি দখলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত পটু। তিনি হবিগঞ্জের সাবেক সংসদ-সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, শহরে অসংখ্য বাড়ি, জমি সাবেক এমপি আবু জাহির দখল করেছেন। সরকারি, ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো জায়গা তিনি ছাড়েননি। স্কুলের বাসা, মার্কেট পর্যন্ত দখল করেছেন। যে ব্যক্তি ভাড়া বাসায় থেকে ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি তিনি এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। ছয় তলা বিশিষ্ট বাড়ি করেছেন। বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি কিনেছেন। প্রায় আড়াইশ ভরি স্বর্ণ কিনেছেন। শাহজাহান মিয়া নামে একজন বলেন, হবিগঞ্জের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে আবু জাহিরের জায়গা বা বাসা নেই। তিনি অসংখ্য বাসা দখল করেছেন। অলিপুরে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের একটি জায়গা দখল করেছেন। টাকা পাচার করেছেন বিদেশে। মো. আবু জাহির টাউন হল রোডে একটি পুকুরের জমি বিক্রি করে দেওয়ার শর্তে মালিক তাকে ৮.৫ শতাংশ জমি দান করেন। মাটি ভরাট করে এখানে বাসা নির্মাণ করেন ২০০১ সালের দিকে। একতলা বাসায় থাকতেন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বৈদ্যের বাজারে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় আহত হন। এরপরই তার কপাল খুলে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন এমপি মো. আবু জাহির হবিগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি হন। তখনই তিনি স্কুলের ভবন এবং মার্কেট নিজের আয়ত্তে নেন। স্কুলের প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ করে ভবন এবং মার্কেট সংস্কার করে এগুলো নিজের ভাইকে ভাড়া হিসাবে দেন। ভাড়া ধার্য করা হয় বাসা এবং দুটি দোকান সব মিলিয়ে ৯ হাজার টাকা। অথচ এগুলোর বাজার মূল্য হিসাব করলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা একেকটির ভাড়া হওয়ার কথা। টানা সাড়ে ১৫ বছর এমপি থাকার সুবাধে শহরের সার্কিট হাউজ রোডে শায়েস্তানগর এলাকায় একজন প্রবাসীর প্রায় ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাসা দুজনের বিরোধের সুযোগে সালিশ করে দেওয়ার নামে দখল করে নেন মো. আবু জাহির। তেঘরিয়া পিডব্লিউডি অফিসের পাশে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আরেকজনের ৩০ শতাংশ জমি দখল করেছেন। ওই জমির মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। হবিগঞ্জ হাইস্কুলের কোয়ার্টার, মার্কেট প্রভাব খাটিয়ে দখল করেছেন। পুরাতন খোয়াই নদীর কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল করে সেখানে সেলুনপট্টি করেছেন।

হবিগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনের পুকুরের ১৮ শতাংশ জমি নিজের স্ত্রীর নামে করেছেন। বাল্লা সীমান্তে স্ত্রী আলেয়া আক্তার, ছেলে ইফাদ জামিল, ভাই বদরুল আলম, ভাতিজা সাইদুর রহমান এবং নিজের পিএস সুদ্বীপ দাসের নামে ২শ শতাংশ জমি কিনেছিলেন শতকোটি টাকা মূল্যে। বাল্লা স্থলবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হলে চারগুণ মূল্যে সরকারের কাছে এ জমি বিক্রি করেন। শহরের রেলওয়ে বাইপাস সড়কে ঈদগার পাশে এক কানাডা প্রবাসীর ৩০ শতাংশ জমি দখল করেন। ওই জমির মূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম