(বাম থেকে) হাসানুল হক ইনু, জিয়াউল আহসান, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও টিপু মুনশি
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার কাছাকাছি অনেকের নামে হয়েছে এবং হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার রাতে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনিম ফেরদৌস এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, টিপু মুনশিকে ঢাকার গুলশান ১ নম্বর থেকে রাত ১টা ১০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর রাত ২টার দিকে তাকে গুলশান থানায় সোপর্দ করা হয়।
জানা যায়, গতকাল রাতে টিপু মুনশি গুলশানের ১২৩ নম্বর সড়কে অবস্থিত এমজি গ্রুপের মালিকের বাড়িতে ছিলেন। খবর পেয়ে সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের মুখপাত্র ফেরদৌস জানান, রংপুরে করা একটি মামলায় টিপু মুনশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জুলাই মাসে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলন। ওই ঘটনায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এ পর্যন্ত যত মামলা ও গ্রেফতার
গত ৫ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ৮০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টি হত্যা মামলা। বাকি মামলার মধ্যে গণহত্যা এবং অপহরণের মতো মামলাও রয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাবার পর পরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন তার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য।
সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। একই দিন তার কিছুক্ষণ পর আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়। তাদেরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানা যায়।
যদিও পরে আবার পলক, সৈকত ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে একই দিনে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেসময় বিমানবন্দর থেকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকেও আটকের খবর আসে গণমাধ্যমে। তবে তাদের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে কোনো তথ্য মেলেনি।
এদিকে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, গুম ইত্যাদির মামলা করা হচ্ছে। তাদের অনেককে টিপু মুনশির মতো গ্রেফতার করা হয়েছে, অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও গ্রেফতার হয়েছেন।
সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেমন গ্রেফতার হয়েছেন, তেমনি সাবেক অনেক কর্মকর্তাও আটক হয়েছেন।
এদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সেইসাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোয়াহেল, যিনি এক সময় র্যাবে কর্মরত ছিলেন, তাকেও আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।