রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস উন্নয়ন ও সংস্কারে ১১ দফা প্রস্তাবনা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম
রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের গণমানুষের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা স্থাপন, জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ ও রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এ সার্ভিস যাত্রা শুরু করে। সম্পত্তি হস্তান্তর, দলিল রেজিস্ট্রেশন এবং রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের তথ্যাদি বা রেকর্ড সুরক্ষা করা রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসের অন্যতম কাজ।
কালের পরিক্রমায় রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ, জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক বিপুল রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বর্তমান সময়ে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসের কাজের ব্যাপ্তি ও গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দলিল রেজিস্ট্রেশন সেবা সহজীকরণ, দাপ্তরিক কাজে স্বচ্ছতা আনয়ন এবং সেবার মান বৃদ্ধিকল্পে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস উন্নয়ন ও সংস্কারে আমরা ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করছি-
১। সেবাদানে দায়িত্ব ও কর্মপরিধির গুরুত্ব এবং রাজস্ব আদায়ে অবদান বিবেচনায় রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসকে ক্যাডার সার্ভিসে উন্নীত করতে হবে।
২। মন্ত্রণালয়ে পৃথক ‘রেজিস্ট্রেশন বিভাগ’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং স্বীয় বিভাগীয় অফিসারদের নিয়োগ করে মন্ত্রণালয়ে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৩। ৬ষ্ঠ গ্রেডে সিনিয়র সাবরেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত জেলা রেজিস্ট্রার পদ সৃজন করতে হবে এবং জেলা রেজিস্ট্রার পদসহ ঊর্ধ্বতন সব পদকে আপগ্রেড করে নিবন্ধন অধিদপ্তরের নতুন অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪। কর্মকর্তা ও কর্মচারী বদলির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বদলি বাণিজ্য দূর করতে একটি কার্যকরী ‘কর্মকর্তা এবং কর্মচারী বদলি নীতিমালা’ প্রণয়নপূর্বক ইহা বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈষম্যের শিকার হয়ে সাময়িক বরখাস্তকৃত ও সংযুক্ত কর্মকর্তাগণদের অবিলম্বে পদায়ন করিতে হইবে।
৫। অনলাইনে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য জনস্বার্থে দলিল ই-রেজিস্ট্রেশন সেবা সারাদেশে অতি দ্রুত চালু করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ দলিলের বালাম বহির ডিজিটাল আর্কাইভ ও ডিজিটাল ইনডেক্স ডাটাবেজের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৬। রেজিস্ট্রারিং অফিসারের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেবার মান বৃদ্ধি ও সেবা সহজীকরণে রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ ও রেজিস্ট্রেশন বিধিমালা, ২০১৪ এবং সংশ্লিষ্ট কতিপয় আইন ও বিধিমালা সংশোধন করতে হবে।
৭। নিবন্ধন অধিদপ্তরের জন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকল্পে সারা দেশের পুরোনো ও জরাজীর্ণ জেলা রেজিস্ট্রার অফিস ও সাবরেজিস্ট্রার অফিসসমূহের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণ করতে হবে। যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, সেগুলোর নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। জেলা ও তদুর্ধ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি ও পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। ডিজিট ও কমিশনে দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে এবং অধিক্ষেত্রের বাহিরে দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে যৌক্তিক সম্মানী নির্ধারণ করতে হবে। ভ্রমণভাতার হারও যৌক্তিকভাবে পুনঃনির্ধারণ করতে হবে।
৯। জনগুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডের নিরাপত্তা ও জনবহুল এ কার্যালয়ের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্য অথবা আনসার সদস্য মোতায়েন করতে হবে।
১০। নকলনবিশদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। এছাড়া অস্থায়ী কর্মচারী যথা- উমেদার, ঝাড়ুদার, নৈশপ্রহরীদের বাস্তবসম্মত বেতন প্রদান করে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ নিশ্চিত করতে হবে।
১১। দলিল লেখকগণের পারিশ্রমিক যৌক্তিক হারে পুনঃনির্ধারণ করতে হবে এবং দলিল লেখক (সনদ) বিধিমালা, ২০১৪ সংশোধন করতে হবে।