Logo
Logo
×

জাতীয়

নাগরিক সংলাপে বক্তারা

টেলিফোনে আড়িপাতা সংস্থা বিলুপ্তির দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৩০ এএম

টেলিফোনে আড়িপাতা সংস্থা বিলুপ্তির দাবি

টেলিফোনে আড়িপাতা সংস্থা জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) বিলুপ্তির দাবি তুলেছেন নাগরিক সমাজ। এছাড়া সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তারা। 

একই সঙ্গে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তাদের। নাগরিক সমাজ বলছে, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং ভিন্নমত দমনে জনগণের ওপর নজরদারি করেছে। এসব নজরদারি করা সংস্থাগুলো বন্ধ করতে হবে এবং আইনি কাঠামো ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

শনিবার রাজধানীর কাওরানবাজারে বেসিসের সভাকক্ষে ‘সিভিল রিফর্ম গ্রুপ-বাংলাদেশ ২.০’ এর আয়োজনে ‘নতুন বাংলাদেশে আড়িপাতা, গোপনীয়তার অধিকার ও বাকস্বাধীনতা’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে নজরদারিভিত্তিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকার মনোভাব। একটি প্রতিষ্ঠানও নেই, যেখানে দলীয়করণ নেই। ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য আড়িপাতাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। নজরদারি হতো ভিন্নমতকে দমন করার জন্য।

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মতো সংস্থার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান। বলেন, ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবেন বা এখন যারা আছেন, তারা যদি ক্ষমতায় থাকার জন্য সেই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারেন- তাহলে একই পরিণতি হবে। পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বিএম মইনুল হোসেন বলেন, তদন্ত ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো বিশ্বেই আড়িপাতা হয়। সেটা নাগরিকের ওপর নয়। সেটাকে আইনগত আড়িপাতা বলে। আইনগত আড়িপাতা হলে কীভাবে হবে, তথ্য কার কাছে যাবে, কার অনুমতি লাগবে, এগুলোর নিয়মিত নিরীক্ষা হতে হবে। এনটিএমসি বা ডট বন্ধ করা হলে অন্য সংস্থাকে দিয়ে তখন আড়িপাতার কাজ চলবে। তাই এগুলো বন্ধ না করে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিকে বদলাতে হবে।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী সারা হোসেন আড়িপাতার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার বলে উলে­খ করেন। বলেন, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় করা প্রয়োজন।

লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, স্বৈরাচারী হওয়ার সঙ্গে এই নজরদারির সম্পর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে প্রস্তর যুগে নিয়ে গেছে। তারা আইন করে অসভ্যতা করেছে। জনগণকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি আড়িপাতার শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিগত সরকারের সময় যারা আড়িপাতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
আড়িপাতার ক্ষেত্রে জবাবদিহির ওপর গুরুত্ব দেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটিগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। সেখানে সব গোয়েন্দা সংস্থার জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকবে। আড়িপাতার আইনগত জায়গা ঠিক করা না হলে ক্ষমতায় যিনিই আসবেন, তিনিই এটা ব্যবহার করবেন। 

অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান বলেন, বিশ্বের সব দেশেই আড়িপাতা হয়। তবে নাগরিকের জীবনে ব্যাঘাত ঘটে, এমন কাজ করে না। কিন্তু বাংলাদেশে খুব নিকৃষ্ট কাজ হয়েছে।

এর আগে আলোচনার শুরুতে সংলাপের আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়ক ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার ও রাষ্ট্রের আড়িপাতার আইনগত বিষয় নিয়ে এক উপস্থাপনা তুলে ধরেন। 

ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা ও আশরাফ কায়সার, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ, আইনজীবী মিতি সানজানা, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন প্রমুখ।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম