Logo
Logo
×

জাতীয়

রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন সালমান ও আনিসুল

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৫ এএম

রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন সালমান ও আনিসুল

ফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নাম কেবল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে চরমভাবে অপব্যবহারও করেছিলেন তারা। 

পাশাপাশি ভয়াবহ অর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সালমান। তাই রিমান্ডে হত্যা মামলার পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতির মন্দা অবস্থা সৃষ্টি করাসহ বিগত সরকারের অপকর্ম ও দুর্নীতিসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা দিচ্ছেন অজানা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা করার চিন্তা করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। 

সাবেক দুই এমপিসহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মামলা তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার (পাপশ বিক্রেতা) শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে।

বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তারা এখন ডিবি হেফাজতে আছেন। যে মামলায় তারা রিমান্ডে আছেন ওই মামলায় কোনো আসামির নাম নেই। তবে অজ্ঞাতনামা হিসাবে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সদ্য বিদায়ি সরকার আমলে গত ১৬ জুলাই করা মামলায় ধরা খেলেন ওই সরকারের প্রভাবশালী এই উপদেষ্টা ও মন্ত্রী। রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তারা দেশে অনাকাক্ষিত পরিস্থিতি তৈরির জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপর।

হেফাজতে থাকা সালমান ও আনিসুল দুজনই তিনবেলাই ডিবির সরবরাহ করা খাবার খাচ্ছেন। খাবার তালিকায় আছে সকালে ডাল, রুটি, সবজি এবং দুপুরে ও রাতে ভাত, মাছ-মাংস, ডাল, সবজি। ডিবিতে তাদের রাখা হয়েছে সাধারণ অপরাধীদের মতো। এক্ষেত্রে তারা কোনো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ ও কাপড়চোপড় বাইরে থেকে দেওয়া হয়েছে। 

ডিএমপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের অপরাধ শুধু পুলিশ কেইসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শেয়ারবাজারসহ অনেক অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত সালমান এফ রহমান। সরকারের অনেক অপকর্মকে আইনি বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন আনিসুল হক। তাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে হত্যা মামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও আইনগত বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। 

সূত্র আরও জানায়, যে মামলায় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই মামলার ভিকটিম গুলিতে মারা গেছেন। অথচ এজাহারে বলা হয়েছে কোটাবিরোধী জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের এলোপাতাড়ি আঘাতে ভিকটিম শাহজাহান মারা গেছেন। মামলায় কেন মিথ্যাচার করা হয়েছে, সেই বিষয় নিয়েও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

যে মামলায় সালমান-আনিসুল হককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেই মামলায় আসামি হিসাবে তাদের নাম নেই। যাদের অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে এজাহাদের তাদের বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোক বলা হয়েছে। তাহলে কী সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হক বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, মামলা হলো ফাস্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট। তদন্তের পরই প্রকৃত সত্য উঠে আসবে। যিনি এফআইআর করেন তিনি তার মতো করে ঘটনা বর্ণনা করেন। ওনি যা জানেন তাই প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করেন। এজন্যই সেটির নাম প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা উঠে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এমনিতেই হয়নি। কী কারণে ঘটেছে, কেন ঘটেছে সবই তদন্তে উঠে আসবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা নিশ্চয়ই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কেবল একটি-দুটি মামলায় তারা সংশ্লিষ্ট নয়। সারা দেশে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। ওইসব ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের কী ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হক বিভিন্ন অপকর্মের হোতা। অপরাধ করেও এতদিন তারা বহাল তবিয়্যতে ছিল। ১৫ বছরে মানুষ তাদের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। এবার তারা পার পাবেন না। 

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে বলেন, সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হক এখনো ট্রমার মধ্যে আছেন। তারা বুঝতেই পারেননি যে, এত দ্রুত সরকার পতন হয়ে যাবে। 

জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হক বলেন, ‘দেশে ছাত্র অন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আন্দোলন দমনে তারা খুবই এগ্রেসিভ ছিলেন। এছাড়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বাস্তবতা বোঝানো যাচ্ছিল না। এ কারণে আন্দোলন এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’ সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ডিবির এক কর্মকর্তা দুজনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই দেশের এই অবস্থা।’ এ সময় তারা ছিলেন নির্বিকার। 

যে মামলায় সাবেক প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই মামলার বাদী আয়শা বেগম এজাহারে বলেন, আমার ছেলে শাহজাহান আলী (২৪) নিউমার্কেট এলাকার বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপশের দোকানে কাজ করত। প্রতিদিনের মতো গত ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে তার দোকানে কাজ করতে যায়। বিকাল সোয়া ছয়টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আমাকে ফোনে জানায়, আমার ছেলে শাহজাহান আলী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমি সেখানে যাওয়ার পর জানতে পারি, ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি ঢামেক হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করি। পরে জানতে পারি, ১৬ জুলাই আনুমানিক সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে কোটাবিরোধীদের মাধ্যমে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে নিউমার্কেট থানাধীন টিটি কলেজের সামনে রাস্তায় পড়েছিল। জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অজ্ঞাতনামা আসামিরা লোহার রড, লাঠিসোঁটা ইত্যাদি দিয়ে আমার ছেলের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।    

এ বিষয়ে মামলার বাদী আয়শা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। আমরা গরিব মানুষ। লেখাপড়া জানি না। থানায় গিয়েছিলাম ন্যায়বিচারের জন্য। মামলার এজাহার আমরা লিখিনি। ওটা পুলিশ লিখেছে। পড়ালেখা না জানলেও স্বাক্ষর করতে পারি। পুলিশ এজাহার লেখার পর কেবল স্বাক্ষর দিতে বলেছে। তাই এজাহারে স্বাক্ষর করেছি। একদিকে যেমন ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার চাই, তেমনি যেসব পুলিশ অফিসার মিথ্যা এজাহার লেখার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার দাবি করছি। 

জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ওসি আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ভিকটিম শাহজাহান গুলিতেই মারা গেছেন। তার মাথায় গুলির ছিদ্র ছিল। সেখান থেকে পিলেট উদ্ধার করা হয়েছে। শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। এভাবেই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এজাহারটি প্রাথমিকভাবে লেখা হয়েছিল। তারপর এজাহার লেখার পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের উচিত ছিল স্বাক্ষরের আগে বাদীকে পড়ে শোনানো। এ ক্ষেত্রে যে পুলিশ সদস্য এই ভুল করেছিলেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, শাহজাহান হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে আমি ছাড়াও তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংযুক্ত আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে, তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই বলা ঠিক হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম