Logo
Logo
×

জাতীয়

প্রশাসন ও সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে রদবদল নিয়ে কী হচ্ছে?

Icon

বিবিসি বাংলা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম

প্রশাসন ও সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে রদবদল নিয়ে কী হচ্ছে?

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলি, পদায়ন কিংবা নতুন নিয়োগের কাজ শুরু করেছে।

বুধবার সচিব পদমর্যাদার ১০ কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল হয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এতদিন কোণঠাসা কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব নিতে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত দেড় দশকে পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কিংবা পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় বিবেচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছিল বেশি। যে কারণে সরকার পরিবর্তনের পরই এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবুল কাশেম মজুমদার বলেছেন, পুরোপুরি দলীয়করণের কারণেই প্রশাসন ও সরকারে একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তখন যদি যোগ্য ও মেধাবীরা এসব পদে থাকতো তাহলে হয়তো তাদের সরে যেতে হতো না।

নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার আগেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পুলিশের আইজিপি’র বিভিন্ন নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

গত ১৬ বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন জায়গায় এমন নিয়োগপ্রাপ্তদের রদবদল কিংবা অব্যাহতি দেওয়ার ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এমন অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে পরিবর্তন কিংবা সংস্কার করা হলে এ নিয়ে সংকট তৈরি হবে কি না সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, যখন সরকার পরিবর্তন হয়, তখন আরেকটু জরুরি ভিত্তিতে পরিবর্তন দরকার হয়। দায়িত্বে থেকে এখন যারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না, সে সব জাতীয় জায়গায় দ্রুত পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অনেকেই পদ ছেড়ে গেছেন।

এদের মধ্যে কেউ চাপের মুখে পদ ছেড়েছেন। কেউ পদ ছেড়েছেন স্বেচ্ছায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব থেকে সরে গেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল, কয়েকজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের অনেকেই ।

এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গর্ভনরসহ চারজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন থেকেই তাদের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাংকটিতে বিক্ষোভে নেমেছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এছাড়াও ঢাকা-জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ থেকে সরে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, এতদিন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দিয়েছিলেন। পট পরিবর্তনের কারণে ঐসব পদে থাকা ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় সরে যাচ্ছেন।

গত এক সপ্তাহে সরকার ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানদেরও সরিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের পদ থেকে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগদানের কারণে সরকারে পরিবর্তনের পর সে সব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার করতে হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে।

তবে প্রশাসনে সংস্কারের ক্ষেত্রে আবারও ‘আরেকটি দলীয়করণ’ যাতে না হয় সেবিষয়ে সতর্ক করছেন কোন কোন বিশ্লেষক।

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে যা ভাবছেন সমন্বয়করা

বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে মেয়াদ শেষের পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সাবেক শেখ হাসিনার সরকার।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার দুই দিনের মাথায় মুখ্যসচিবের চুক্তি বাতিল হয়। তবে এখনো বহাল আছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক বা আইজিপি পদে ছিলেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এই পুলিশ কর্মকর্তার মেয়াদ শেষ হয়েছিল আরো দুই বছর আগে। কিন্তু দুই দফায় তার মেয়াদ বাড়ায় সদ্য বিদায়ী সরকার।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর  মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন আইজিপি।

জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন অনেকেই।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগগুলো দেখে দেখে বাছাই করে করা হয়, যারা সরকারের সবচেয়ে বেশি পারপাস সার্ভ করেছে তারাই এমন নিয়োগ পেয়েছেন বিগত সরকারের সময়।

স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসনের কোনো পদ খালি হওয়ার পর আরেকজন কর্মকর্তা বসেন সেই পদে। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে অনেকেই মনে করেন তারা পদবঞ্চিত হয়েছেন।

অধ্যাপক ইউনূসের বিশেষ সহকারী আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিশেষ বিবেচনায় অনেক জায়গায় চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োগ পেয়েছিল অনেকে। আমরা সেগুলোকে বাছাই করে যাদেরকে প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে না তাদের বাদ দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ দিচ্ছি।

শুধু বাতিল নয়, যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে ক্ষমতা চর্চা ও দুর্নীতি করেছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সবচেয়ে স্থবিরতা তৈরি হয় পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে। পুলিশ-র‍্যাবের প্রধান পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন করা হয়।

কাজে ফিরলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি পুলিশ প্রশাসনে। কেননা তখন পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাদের কেউ কেউ শেখ হাসিনার পতনের পর আর দায়িত্বে ফেরেনি।

উচ্চ আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের যে সব প্রতিষ্ঠানগুলো এমন নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার অনেকগুলো শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের অবস্থা যদি নিরপেক্ষ হতো তাহলে এমন হওয়ার কথা না। পুলিশ জনগণের বন্ধু না হয়ে সরকারের স্বার্থ হাসিল করেছে। যে কারণে পট পরিবর্তনের সাথে সাথে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এই স্থবিরতা কাটাতে আমাদের তৎপরতা বেড়েছে। সবাইকে অতিরিক্ত শ্রম দিতে হচ্ছে।

নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করছে নতুন পদায়নকৃতরা কাজ শুরু করার পর দ্রুতই এই সংকট কাটবে। তবে এক্ষেত্রে ‘যোগ্যদের’ বিবেচনায় নেয়ার ইঙ্গিতও দিচ্ছেন তারা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম