Logo
Logo
×

জাতীয়

শাহবাগে সম্প্রীতি সমাবেশ

সব মানুষের মর্যাদা নিশ্চিতের দাবি

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম

সব মানুষের মর্যাদা নিশ্চিতের দাবি

ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবার মাঝে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় বুধবার রাজধানীর শাহবাগে সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করেছে ‘একতার বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন। সমাবেশ থেকে সব মানুষের মর্যাদা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সমাবেশে যোগ দিয়ে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

শাহবাগ মোড়ে বিকাল ৪টায় সংগঠনের মুখপাত্র তাহমীদ আল মুদাসসিরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু সায়েম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক শাফী মোহাম্মদ, ফাদার তপন ডি রোজারিও এবং কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। সমাবেশের একপর্যায়ে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। 

শেখ হাসিনার বিচারসহ চার দফা দাবিতে সপ্তাহব্যাপী তাদের ‘রেজিস্টেন্স উইক’-এর দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি পালনের অংশ হিসাবে তারা এ সমাবেশে যোগ দেন। একতার বাংলাদেশ-এর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তৃতা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার ও সারজিস আলম। 

পরে তারা ছাত্র আন্দোলনে নিহত রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজসহ সব শহিদের স্মরণে শাহবাগ মোড় থেকে ধানমন্ডি রাপা প্লাজা অভিমুখে পদযাত্রা করেন। সমাবেশে বাংলাদেশের সম্প্রীতি কামনা করে শপথপাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক। 

শপথ পাঠকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আমার প্রতিটি পদচিহ্ন হবে ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখার একেকটি প্রতিরূপ। সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে আমার রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশীজনের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধ। আমার কাছে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়নই হবে ব্যক্তিগত স্বার্থকে সমুন্নত রাখার একমাত্র রক্ষাকবজ। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমার কার্যক্রম এবং চিন্তার পরিসর জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে সব সময় ক্ষমতায়িত করবে। আমি জীবনের যে কোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করব না। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সাদিক কায়েম বলেন, আমাদের আন্দোলনের মুখে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে; কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। তিনি বলেন, হাসিনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছেন। তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র দ্রুত বুঝে ফেলেছে। তাই আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের ভাই-বোনদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের সহযোগিতার জন্য।

দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, একতার বাংলাদশকে সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছি। একতার বাংলাদেশ চাই। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫২ বছরে কোনো হামলা বা আক্রমণের বিচার পায়নি হিন্দুসমাজ। এ দেশ আমার, আমাদের। আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই না। আমরা একটি পরিবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদিক মোহাম্মদ বলেন, আমরা কোনো বৈষম্যের বাংলাদেশ চাই না। সবার ধর্ম পালনের অধিকার চাই। কোনো ভেদাভেদ চাই না। সাম্যের বাংলাদেশ চাই।
অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, যতদিন দেশ থেকে কুচক্রী মহল বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের পাহারা থাকতে হবে। কোনোভাবেই কুচক্রী মহলকে ছাড় দেওয়া যাবে না। দিলি­তে পরিত্যক্ত স্বৈরাচার আছেন, অথচ তার ছেলে জয় বলেন, তার মা পদত্যাগ করেননি। 

১৫ আগস্টে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ফের রাস্তায় এলে পা ভেঙে দেব হাসনাত আব্দুল্লাহ: পদযাত্রার আগে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা আমাদের টুঁটি চেপে ধরেছে, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা করেছে, আমাদের শিবির ট্যাগিং দিয়েছে, হলে হলে নির্যাতন করেছে, আমাদের ভাইদের অমানুষিক মধ্যযুগীয় কায়দায় অত্যাচার করেছে, আমাদের বোনদের ছাত্রলীগ-যুবলীগ যেভাবে হামলা-নির্যাতন করেছে, তারা যদি আর কখনো এই বাংলার মাটিতে যড়যন্ত্র করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করা হবে। এখন দেখেছি বিভিন্ন যড়যন্ত্র চলছে। আমরা প্রশাসনিক ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা জুডিশিয়ারি ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা মিলিটারি ক্যু ঠেকিয়েছি। আমরা খবর পেয়েছি ১৫ আগস্টে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, আওয়ামী দোসররা আবার ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে। যারা জনগণের অধিকার লুণ্ঠন করেছে, স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে, তারা যদি ফের রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করে, তাহলে ছাত্র-জনতা তাদের পা ভেঙে দেবে।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যখনই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে, তখন আওয়ামী দোসররা কীভাবে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, জমি দখল করেছে। শাহবাগ থেকে ঘোষণা দিতে চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের প্রাথমিক পরিচয় বাংলাদেশি।

সারজিস আলম বলেন, স্বৈরাচার ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র করতে এসে ধরা পড়লে গায়েবানা জানাজা পড়ারও লোক খুঁজে পাবেন না। স্বৈরাচারের দোসররা অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালায়নি। লুকিয়ে আছে আমাদের আশপাশে। যে নৌকার মাঝি সাজুক না কেন, তাদের নৌকাসহ ডুবিয়ে দিতে হবে। আমরা একটি ধাপ পার করেছি মাত্র। যতদিন জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না যায়, ততদিন দশ মিনিটের ঘোষণায় রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। 

সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো সেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভাঙচুরসহ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল, তারা বিভিন্ন জায়গায় উপাসনালয়ে হামলা চালিয়েছে; কিন্তু ছাত্র-জনতা তা রুখে দিয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা আবারও রক্ত দিতে প্রস্তুত।
শিক্ষার্থীরা পদযাত্রায় ‘খুনি হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান; বিচার বিচার বিচার চাই, খুনি হাসিনার বিচার; হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান; উই ওয়ান্ট জাস্টিস; সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও; ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও; ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

তাদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে; সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলসহ যারা পরিকল্পিত ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের বিচার নিশ্চিত করা; প্রশাসন ও বিচার বিভাগের যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা এবং হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদ বারংবার কায়েমের চেষ্টা করেছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে; প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম