Logo
Logo
×

জাতীয়

ব্যাংক লুটের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম

ব্যাংক লুটের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি

প্রতীকী ছবি

গত ১৬ বছরে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী সরকারের আনুকূল্যে ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও শেয়ারবাজার লোপাট করেছেন। দেশের অর্থনীতিকে বিপৎসংকুল করে তুললেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি। তারা ব্যবসায়ী সমিতি-চেম্বারগুলোকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। এখন সময় এসেছে ওইসব ব্যবসায়ীর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সংস্কারের। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের স্বার্থে এ কাজটি করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। 

বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে ব্যবসায়ী সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ কে আজাদ, মীর নাসির হোসেন, জসিম উদ্দিন প্রমুখ। 

এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক আব্দুল হক বলেন, সরকারের মদদে একটি গোষ্ঠী রাতের আঁধারে ব্যাংক দখল করেছে, ব্যাংক লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে। ওই কোম্পানি একটি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এ লুটপাট হলিউড-বলিউডের সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। টাকার মান কমেছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এসব লুটপাতের কারণে। এ ধরনের ব্যাংক লুটেরাদের শ্বেতপত্র জাতির সামনে প্রকাশের দাবি জানাই। 

সুইং থ্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম হায়দার বলেন, ১৬ বছর ধরে ব্যবাসয়ী সংগঠনগুলো ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করেনি। এগুলো রাজনৈতিক হাতিয়ার ছিল। সাধারণ সদস্যদের কথা বলা বারণ ছিল, তাদের নাচগানে মশগুল রাখা হয়েছে। কেবল এফবিসিসিআই থেকে নমিনেশন প্রথা বাতিলের মাধ্যমে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোয় গণতন্ত্র ফেরত আনা সম্ভব। এফবিসিসিআই-এর বর্তমান পরিষদের ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করেন তিনি। আবুল কাশেম আরও বলেন, ব্যাংক-শেয়ারবাজার লুটপাট করা হয়েছে। যারা ব্যাংক লুটপাট করেছে, অর্থ পাচার করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব দুষ্কৃতকারী ব্যাংকগুলোকে লুটপাটের মাধ্যমে এমন দুর্বল করেছে যে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র খুলতে পারত না। 

এ কে আজাদ বলেন, পোশাকশিল্পের বিদেশি ক্রেতারা আতঙ্কিত। তারা জানতে চায় অর্ডার যথাসময়ে শিপমেন্ট করতে পারব কিনা। ইতোমধ্যে অনেক ক্রেতা ২০ শতাংশ অর্ডার অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাই দ্রুত বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে একটি বার্তা দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি। 

মীর নাসির হোসেন বলেন, একটি গোষ্ঠী ব্যাংকগুলো কুক্ষিগত করায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যাংক ঋণ পায়নি, সুদের হার বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে প্রাতিষ্ঠানিক বা আইনগত সংস্কার সম্ভব নয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংস্কারকাজ শেষ করতে হবে। কোটা আন্দোলনে হতাহত শিক্ষার্থীদের পাশে হাত বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মীর নাসির বলেন, শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে ব্যবসায়ীরা একটি তহবিল গঠন করতে পারেন। 

বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ১৬ বছরে সরকারের আনুক‚ল্যে ব্যাংক থেকে লাখ কোটি টাকা পাচার ও লুট হয়েছে। সেটি রোধ করতে না পারায় ব্যবসায়ী হিসাবে আমরা লজ্জিত। লুটেরা ও অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, বিগত সময়ে সরকারের অনুগত দাসের ভ‚মিকায় ছিল ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। কথা বলতে চাইলেও মুখ বন্ধ করে দেওয়া হতো। যারা শেয়ারবাজার লুট করেছে, তারাই ছিল হর্তাকর্তা। 

এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ৩ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা ভালো নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক, মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী, সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটবে না যতদিন দেশে সামাজিক শৃঙ্খলা না আসবে, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে। আজ বাংলাদেশে যারা বড়লোক, তারা সম্পদ সৃষ্টি করা ছাড়া সম্পদ অর্জন করছে। এদের কাছ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে চাইলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংগঠনের মতো প্রতিটি প্রতিষ্ঠান জনগণের টাকায় পরিচালিত। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার খুবই দরকার। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য কাজ করতে দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া বাদে অন্য গণতন্ত্রহীন দেশে অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। গণতন্ত্র ও রাজনীতি একে অন্যের সম্পূরক ও পরিপূরক। একটা ছাড়া আরেকটা সমাজকে উন্নত করতে পারে না। 

মিন্টু আরও বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা নেতা থাকবেন ব্যবসায়ী সমাজে। এর মানে এ নয়, যে যখন সুযোগ পাব, আমরা দলবাজি করব। ব্যবসায়ী সংগঠনের কাজ হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে নিজ থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া ভালো।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ঢাকা চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আশরাফ আহমেদ, সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, সবুর খান, সিলেট চেম্বারের আলিমুল এহসান, এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক জালাল উদ্দিন, আব্দুল ওয়াহেদ, আফজাল হোসেন প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম