টাকা পাচার ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন বন্ধ ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:১২ এএম
টাকা পাচার, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও এসব বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। কোনো ব্যাংক থেকে কোনো গ্রাহক যাতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা উত্তোলন বা স্থানান্তর করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মানি লন্ডারিং প্রতিপালন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএফআইইউ-এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে আগামীকাল শনিবার বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু ব্যাংকের শাখা খোলা থাকবে। এছাড়া অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম সেবা, মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং সব সময়ই খোলা থাকে। ওইসব ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে কোনো গ্রাহক যাতে অতিরিক্ত টাকা তুলে পাচার, মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ওই বৈঠকে। প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে মানি লন্ডারিং বিধিবিধানের প্রতিপালন কর্মকর্তা রয়েছেন। ওই কর্মকর্তাদের ডেকেই বিএফআইইউ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর কাছে কোনো গ্রাহকের লেনদেন বা টাকা তোলার বিষয়ে কোনো সন্দেহ হলে ওই লেনদেন স্থগিত করতে পারবেন। এখনকার কোনো লেনদেনের মাধ্যমে যাতে টাকা পাচার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করার মতো কোনো ঘটনা না ঘটতে পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
বৈঠকে সতর্ক করে বলা হয়, ব্যাংকারদের অবহেলার কারণে কোনো গ্রাহক যদি অসৎ উদ্দেশ্যে টাকা তুলে নিয়ে তা পাচার করে বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা যাতে তাদের হিসাব থেকে নগদ সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার বেশি তুলতে না পারে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে অনলাইন ব্যাংকিং বা ডিজিটাল মাধ্যমে তারা এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে বা ব্যাংকে যে কোনো অঙ্কের টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না। এ বিধিনিষেধ শুধু বৃহস্পতিবারের জন্যই প্রযোজ্য ছিল।
এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আর বাড়বে কি না, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু বলা হয়নি। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা যদি নতুন কোনো নির্দেশনা দেন সে আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে ফোন করে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যাংকের এমডিরা রাতেই শাখাগুলোর ব্যবস্থাপকদের জানিয়ে দেন। ফলে বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর যেসব শাখা খোলা ছিল সেগুলো থেকে কোনো গ্রাহক নগদ এক লাখ টাকার বেশি তুলতে পারেননি। তবে অনলাইনে গ্রাহকদের যে কোনো অঙ্কের টাকা স্থানান্তর করতে কোনো বাধা ছিল না।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশত্যাগের ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে অনেকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা তুলে তা নগদ আকারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এছাড়া ওইসব অর্থ বিভিন্ন স্থানে ঘুস দিয়ে নানা স্বার্থ উদ্ধার করছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এদিকে বিএফআইইউ থেকে আজ বা আগামীকাল শনিবারও বিশেষ অনলাইন, এটিএম সেবার মাধ্যমে সংঘটিত লেনদেনের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে বলা হয়।