‘সংবিধান বহাল নাকি বাতিল– এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি নতুন সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে চান’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি এবং আইন ও সংবিধান বিশ্লেষক সালেহ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার এ সাক্ষাতে বর্তমান সংকট উত্তরণে আইন এবং সাংবিধানিক উপায় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
সাংবাদিক সালেহ উদ্দিন জানান, রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে তিনি বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন। এ সময় তারা নতুন সরকার গঠন এবং ভবিষ্যত সরকার পরিচালনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় নতুন সরকার গঠন হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান বহাল রেখে নাকি বাতিল করে হবে– এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি নতুন সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে চান বলে জানিয়েছেন।
ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি বলেন, ‘নতুন সরকার যদি এটাকে গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সংবিধানের বাইরে গিয়ে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠন করতে চান তাহলে এক উপায়ের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। যেমন সামরিক আইন জারির পরে মার্শাল ল’ প্রোকলেমেশন দিয়ে হতো। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত জরুরি অবস্থার সরকারের সময় জরুরি বিধিমালা দিয়ে সরকার পরিচালনা করা হয়েছিল। তাহলে এটা হবে জাতীয় বিপ্লবী সরকারের ঘোষণা সংক্রান্ত বিধিমালা বা জাতীয় সরকারের আদেশ সংক্রান্ত বিধিমালা।’
তিনি বলেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে সরকার গঠন করতে চাইলে কিছু সাংবিধানিক ব্যত্যয় ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ, সংসদ বাতিল এবং সংসদ গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে যে নির্দেশনা রয়েছে তাতে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে সংসদের আস্থাভাজন অন্য কাউকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন আস্থাভাজন অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
সংবিধানের আরেকটি বিধান রয়েছে, অনুচ্ছেদ ৫৬-এর ২ এবং ৩ উপধারায় সংসদ বাতিল এবং আগামী নির্বাচনের অব্যাহতিকালে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপতি বাতিল সংসদের সদস্যদের মধ্য থেকে নিতে হবে। ১০ জনের একজন সংসদের বাইরে থেকে নিতে পারবে। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তিনি কোনো সংসদ সদস্যকে পাননি। সংসদ সদস্যরা বেশিরভাগই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ফলে দেশ সরকারবিহীন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি একটি সরকার গঠন করবেন, সেটা জাতীয় সরকার হোক আর বিপ্লবী সরকারই হোক, তা নির্ধারণ করবে নতুন সরকার ।
সিনিয়র সাংবাদিক এবং আইন ও সংবিধান বিশ্লেষক সালেহ উদ্দিন বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে সরকার গঠন হলে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু সংবিধানের মধ্যে থেকে করতে হলে সরকার গঠনের পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। কারণ এখানে সংবিধানের কিছু ব্যত্যয় ঘটতে পারে। রাষ্ট্রপতি কী পরিস্থিতিতে এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে এ সরকার গঠন করতে হয়েছে তা সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স পাঠিয়ে অনুমোদন করে আনতে হবে। কেননা সংবিধানে একটি ক্রান্তিকালীন বিধান ছিল, পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ ক্রান্তিকালীন বিধানও বাতিল করা হয়েছে। ফলে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স লাগবে।
রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পর তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন প্রক্রিয়ায় সরকার পরিচালনা করা হবে। নতুন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথাও জানান রাষ্ট্রপতি।