Logo
Logo
×

জাতীয়

পালটে গেছে সচিবালয়ের সেই চিরচেনা রূপ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৫ পিএম

পালটে গেছে সচিবালয়ের সেই চিরচেনা রূপ

সচিবালয়। ছবি: সংগৃহীত

পালটে গেছে সচিবালয়ের সেই চিরচেনা রূপ। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর ঘিরে প্রতিদিন মানুষের যে ভিড় দেখা যায় ছিল না তার ছিটেফোঁটাও। রীতিমতো খাঁ-খাঁ করছে তাদের দপ্তরগুলো। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের স্টাফদেরও খুঁজে পাওয়া গেল না। সরিয়ে ফেলা হয়েছে তাদের নামফলকও। কোথাও নামফলক থাকলেও মুছে ফেলা হয়েছে মন্ত্রীদের নাম। সকাল থেকেই সচিবালয়জুড়ে বিরাজ করছিল একটা গুমোট পরিবেশ। এরই মধ্যে কর্মকর্তারা অফিসে উপস্থিত হয়েছেন। 

তবে দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ করে একযোগে সচিবালয় ছাড়তে শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মুহূর্তেই গোটা সচিবালয় ফাঁকা হয়ে যায়। সবাই বলাবলি করছিলেন পুলিশ সদর দপ্তর ও নগর ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়েও হামলা হতে পারে। তবে একযোগে অফিস ছাড়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। ওই দিন বিকালেই মঙ্গলবার থেকে অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু মন্ত্রীর নামই সরানো হয়নি, পুরো নামফলকটিই সরিয়ে ফেলা হয়েছে।  

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নামফলকটি আগের জায়গায় থাকলেও মুছে ফেলা হয়েছে তার নাম। 

এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও প্রায় সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের ইউনিফর্ম রেখে সাদা পোশাকে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা যায়। তবে অফিস করেছেন এমন সচিবদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। এর মধ্যে ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান অল্প সময়ের জন্য অফিস করেছেন। উপস্থিত অনেকের চোখে-মুখেও ছিল অজানা আতঙ্কের ছাপ। 

তবে নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের এক নম্বর গেট ছাড়া বাকি সব গেট বন্ধ ছিল। দেখা গেছে, এক নম্বর গেটে দাঁড়িয়ে সেনাসদস্যরা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গাড়িগুলোকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। এক ও দুই নম্বর গেটের মধ্যবর্তী দর্শনার্থী অভ্যর্থনা কক্ষেও সেনা সদস্যরা রয়েছেন। সচিবালয়ের কোথাও ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। 
সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে জায়গায় জায়গায় কর্মচারীদের জটলা করে সরকারের পতন নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের জানান দিতে শুরু করেছেন। সকাল ১০টার দিকে ৬ নম্বর ভবনের সামনে বিএনপিপন্থি ২০-২৫ জন কর্মচারীকে দেখা গেছে। তাদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. আব্দুল খালেককে উত্তম-মধ্যম দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনে জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে দীর্ঘ ব্যানার লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো সব খুলে ফেলা হয়েছে। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সোমবার আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তবে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা ব্যর্থ হন। 

এর আগে সোমবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে।

সকালেই বন্ধ করা হয় পরিকল্পনা কমিশন : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরদিন মঙ্গলবার নিরাপত্তার অভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় পরিকল্পা কমিশন। এ সময় প্রধান ফটকে কোনো পুলিশ ছিলেন না। কোটাবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্রকে প্রধান ফটক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কমিশন চত্বরের ভেতরে পরিবেশ ছিল থমথমে। বেলা ১১টায় ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সকালে যথারীতি সচিব, পরিকল্পনা কমিশন সদস্য (সচিব), কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিসে আসেন। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে অফিস ছুটি ঘোষণা করা হয়। ফলে আতঙ্কিতভাবে সবাইকে চলে যেতে দেখা যায়। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম