বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। এ ঘটনার পর বাংলাদেশের সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। একই সঙ্গে তারা গণতান্ত্রিক পন্থায় উত্তরণের আহ্বান জানিয়েছে। তবে রাশিয়া একে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উলে­খ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র : দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে তারা স্বাগত জানান। তবে, যে কোনো উত্তরণ তারা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে সেনেট মেজরিটি লিডার চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বৈধ প্রতিবাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহিংস প্রতিক্রিয়া তার নেতৃত্বের প্রতি মানুষের সমর্থন তুলে দিয়েছে। আমি সাহসী আন্দোলনকারীদের প্রশংসা করছি ও একই সঙ্গে নিহতদের জন্য ন্যায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সবার অধিকারকে সম্মান করে এবং দ্রুত গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন করে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন : উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ স্থানান্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাদের নির্বিচারে আটক করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত।

যুক্তরাজ্য : বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা জাতিসংঘের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এ আহ্বান জানান। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে যে সহিংসতা আমরা দেখেছি ও তা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ শিক্ষার্থী, শিশু ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ সবার প্রাণহানির ঘটনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি গণতন্ত্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশের জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

রাশিয়া : বাংলাদেশের উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিকে অভ্যন্তরীণ বিষয় উলে­খ করে রাশিয়া বলেছে, তারা আশা করে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত সাংবিধানিক ধারা ফিরবে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আরও বলেছে, বাংলাদেশ পরিস্থিতি এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা আশা করে শিগগিরই একটি অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে সরকারের পরিবর্তন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই নীতির ওপর কাজ করে মস্কো। যা-ই হোক আমরা বন্ধুপ্রতিম দেশে যত দ্রুত সম্ভব সাংবিধানিক ধারা ফেরার প্রত্যাশা করি।  

জার্মানি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাংলাদেশের চলমান ঘটনাবলীর বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অস্থিরতার মধ্যেই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।’

কানাডা : কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি এক বিবৃতিতে বলেন, এই উত্তরণের সময় তারা সব পক্ষকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার জন্য আহŸান জানাচ্ছেন।

ভারত : ভারতের মোদি সরকার শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলেনি। তবে সর্বদলীয় বৈঠকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ তারা পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

শ্রীলংকা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে সহনশীলতা ও ঐক্যে বিশ্বাস করি। দ্রুতই সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করছি। বাংলাদেশের জনগণ এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি খুঁজে পাবে এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল : সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গবেষক তাকবির হুদা সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেসি নাওকে বলেন, ব্যাপক সহিংসতার মধ্যেই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তার সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি আরও সংবেদনশীল হলে এসব সহিংসতা এড়ানো যেত। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করেছে উলে­খ করে তিনি বলেন, বেসামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত সামরিক শাসন থাকলেও সেটি যেন বেশি দিন স্থায়ী না হয়।