আন্দোলনকারীদের এক দফায় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে আওয়ামী লীগ
বিবিসি বাংলা
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪৭ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণার তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে।
পাশাপাশি পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বা কেমন হয় এবং সরকার সেটি কোন প্রক্রিয়ায় সামাল দেয়- তা নিয়ে উদ্বেগও জানা গেছে কোন কোন নেতার কণ্ঠে।
দলটির সর্বস্তরে ‘এক ধরনের ঐক্যের সুর’ তোলার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কিছু নেতার সঙ্গে আলাপ করে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
এসব নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বিবেচনা করে কোটা আন্দোলনকারীদের বিষয়ে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের একটি অলিখিত নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দেওয়া ছিলো।
কিন্তু শনিবার আন্দোলনকারীদের একজন সমন্বয়ক তাদের একদফা ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ধরে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের সর্বস্তরেই।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, শিক্ষার্থীদের মুখোশে কারা আন্দোলন করেছে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে এবং এদের প্রতিরোধে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের দিক থেকেও আইনগত যা যা পদক্ষেপ নেওয়া যায় এখন তার সবই নেওয়া হবে।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেকজন সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান বলছেন, 'আন্দোলনকারীদের মূল চরিত্র প্রকাশ পেয়ে গেছে এবং সে কারণে এখন আর ছেড়ে কথা বলা হবে না।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলন থেকে শনিবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পদত্যাগের দাবি ঘোষণা করা হয়। এর আগে তাদের যে নয় দফা ছিলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমা দাবি, কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি থাকলেও সরকারের পদত্যাগের দাবি ছিলো না।
গত ১৬ জুলাই থেকে এ আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা শুরু হয় এবং সেদিনও সহিংসতায় অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এরপর ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের ব্যাপক সহিংসতায় দেড়শর বেশী মানুষের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে দুশোর বেশী মানুষ নিহত হয়েছে এবারের এই আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংসতায়।
এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের আলোচনার আহবান জানানো হলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। ওই দিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে।
দলের বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাহলো ১৬ থেকে ১৯ জুলাইয়ের হতাহতের ঘটনা নিয়ে এক ধরনের বিস্ময় ও বিরক্তি ছিলো অনেকের মধ্যে।
কেন হুট করে বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হলো সেটি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা।
তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ দাবি করছেন যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যখন যে পদক্ষেপকে যৌক্তিক মনে করেছে সেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে।
অবশ্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলছেন, তারা আগে থেকেই বলেছেন যে কোটা আন্দোলন ব্যানারে তাদের মূল লক্ষ্য রাজনৈতিক এবং সেটি হলো সরকারের পতন ঘটাতে বিএনপি জামায়াতের পারপাস সার্ভ করা। এখন তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ হয়ে গেছে। তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতেই প্রমাণ হয়ে গেছে। ফলে সরকারেরও আর পদক্ষেপ নিতে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকবে না।
শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম যে ভাষায় এক দফা দাবি ঘোষণা করেছেন তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে।
নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, এ সরকার কোনভাবেই আর এক মিনিট ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করলেই হবে না, বরং খুন, লুটপাট, দুর্নীতি এদেশে হয়েছে তার বিচার হতে হবে। আমরা পদত্যাগ দিয়ে তাকে এক্সিট রুট দিতে চাই না। তাকে পদত্যাগও করতে হবে, বিচারের আওতায়ও আনতে হবে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, এক দফা মামা বাড়ির আবদার, তাই না ? সে এক দফার আন্দোলন করবে আমরা বসে বসে লজেন্স চুষবো? এতো সোজা? আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ হবে এবং যেভাবে প্রয়োজন হবে সেভাবেই হবে। কারণ এখন আর এটার মধ্যে শিক্ষার্থী বা কোটার ইস্যু নাই। এটা জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, এখন যা হচ্ছে সেটি আর কোটা বা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয় বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, ছাত্র সমাজের চাহিদা ছিলো কোটা এবং এ বিষয়ে সব দাবি সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছে। কিন্তু তারপরেও ধ্বংসলীলা চালানো হচ্ছে।
ছাত্ররা এ ধরনের ভাষাই ব্যবহার করতো না। এটায় এখন বিএনপি জামাত আলবদররা এক হয়েছে। তারা সরকার পতনের আন্দোলন করতে চাইছে। আমরা এটা রুখে দিবোই।
এদিকে দলের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা বলছেন যে তারা মনে করছেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে হঠাৎ করে দলে একটা ‘ঐক্যভাব’ ফিরে এসেছে এবং যেসব এলাকায় নেতাদের মধ্যে বিরোধ ছিলো তারাও পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করছেন।
অন্যদিকে দলের এক অংশের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ আছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অবস্থানের কারণে। গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ও বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে মতবিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্য ছিলো।
এখন নেতা-কর্মীদের অনেকে মনে করছেন চলমান এই আন্দোলনেও বিদেশি শক্তিগুলোর প্রভাব থাকা ‘অস্বাভাবিক নয়’ বলেই তারা মনে করেন। তবে বরাবরের মতো এবারেও সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সক্ষম হবেন বলেই বিশ্বাস করেন তারা।