ফাইল ছবি
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ দিন সারা দেশে বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। টানা তিন কার্যদিবস বন্ধ থাকার পর বুধবার খুলেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এতে বাড়তি চাপ দেখা যায় রাজধানীর ব্যাংকগুলোতে। টাকা জমার থেকে উত্তোলনের চাপ ছিল বেশি।
বুধবার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, বাংলামটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাংকে অন্য দিনের চেয়ে গ্রাহকদের চাপ বেশি ছিল। বেলা ১১টায় ব্যাংক খোলার আগেই ব্যাংকের শাখাগুলোতে ভিড় করতে থাকেন গ্রাহকরা। ব্যাংকে টাকা জমা বা অন্যান্য কাজের থেকে উত্তোলনের চাপ ছিল বেশি। এতে অনেক শাখাতেই তারল্য সংকট দেখা দেয়। গ্রাহকদের চাপ সামলাতে না পেরে কোনো কোনো শাখা ২টার আগেই গ্রাহক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।
মতিঝিলে সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের অপেক্ষায় থাকা নাজমুল নামের এক গ্রাহক বলেন, আন্দোলনের কারণে গত কয়েক দিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি। হাতে নগদ টাকা ছিল না। বেশ সমস্যায় ছিলাম। তাই সকাল সকাল ব্যাংকে চলে এসেছি।
একই শাখায় টাকা তুলতে আশা আরেক গ্রাহক বলেন, কয়েক দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় টাকা তুলতে পারিনি। এটিএম বুথ ঘুরেও টাকা তোলা যায়নি। কয়েকটি বুথ ঘুরে দেখেছি সেখানে টাকা না থাকায় আমার মতো আরও অনেকেই বেশ সমস্যায় পড়েছেন। বুধবার ব্যাংক খোলার কথা শুনেই চলে এসেছি।
সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে তিন কার্য দিবস ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ সময় হয়তো অনেক গ্রাহকই তাদের নগদ টাকা কেনাকাটায় শেষ করেছেন। সে কারণে বেশিরভাগ গ্রাহকই টাকা তুলেছেন।
একই অবস্থা দেখা যায় ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখায়। টাকা তুলতে আসা একজন গ্রাহক বলেন, কয়েকদিন ধরে নগদ টাকা সংকটের কারণে নানান সমস্যায় পড়েছি। বাজার করতে পারছিলাম না। ব্যাংক খুলেছে, লেনদেন করতে পেরে ভালোই লাগছে। অন্তত কাছে টাকা থাকায় মনে শান্তি পাচ্ছি।
গ্রাহক চাপ সামলাতে না পেরে দেড়টার দিকেই বন্ধ দেখা গেছে এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা। সেখানে গ্রাহক পরিচয়ে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তা কর্মীরা প্রবেশ করতে দেননি। তিনটা পর্যন্ত লেনদেন হওয়ার কথা কিন্তু দেড়টার দিকেই কেন বন্ধ? জানতে চাওয়া হলে এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে বাইরে থাকা কয়েকজন বলেন, টাকা শেষ তাই আর ঢুকতে দিচ্ছে না। তবে পাশেই সাউথইস্ট ব্যাংকে অনেকটা স্বাভাবিক লেনদেন লক্ষ্য করা গেছে।
একজন কর্মকতা বলেন, সকালের দিকে চাপ কিছুটা বেশি ছিল। এখন স্বাভাবিক রয়েছে। এখন (দুপুরে) খুব একটা চাপ দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে টানা তিন দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। সে কারণে বুধবার ব্যাংকে ভিড় বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে কোথাও টাকা দিতে পারছে না এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে নেই। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যাংকিংও চালু ছিল।
এর আগে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত রোববার কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। এতে রবি, সোম ও মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ থাকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজার। তবে স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে ব্যাংকের শাখাগুলো শুধুমাত্র কারফিউ শিথিলকালীন খোলা থাকে।
টানা তিন দিন সাধারণ ছুটির পর বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।