নরসিংদী জেল থেকে পালানো ২ নারী জঙ্গি গ্রেফতার
কোটা আন্দোলনে উগ্রপন্থিদের যোগসাজশ থাকতে পারে: সিটিটিসি প্রধান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১০:০৩ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে সহিংসতা ও নাশকতামূলক কার্যক্রমের নেপথ্যে উগ্রপন্থি বা জঙ্গি সংগঠনের কারও যোগসাজশ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, আন্দোলনে নাশকতা ও উসকানি দিয়েছে এরকম ২-১টি গ্রুপ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন আছেন, যিনি আগেও জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এবারের ঘটনায় অচিরেই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক দুই শীর্ষ নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সিটিটিসি। এদিকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে নরসিংদী জেলা কারাগারের সুপার আবুল কালাম আজাদ ও জেলার কামরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, কারাগার থেকে পালানো ৯ জঙ্গির মধ্যে শীর্ষ দুই নারী জঙ্গি হলেন- ইশরাত জাহান মৌসুমী মৌ (৩০) ও খাদিজা পারভীন মেঘলা ওরফে মেঘনা (৩১)। বুধবার ভোরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) চিরুনি অভিযান চালিয়ে মিরপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
সিটিটিসির এ কর্মকর্তা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেই গত শুক্রবার বিকালে নরসিংদীর জেলা কারাগারে নজিরবিহীন হামলার সময় কোত (অস্ত্রাগার) ভেঙে অস্ত্র ও গুলি লুট করা হয়। জেল সুপার, জেলারসহ ঊর্ধ্বতন কারা সদস্যদের জিম্মি করে মারধর করা হয়। তাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের কারা মসজিদে নিয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়। শত শত বিক্ষুব্ধ জনতার অনেকের হাতে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র ছিল। কারা কর্মকর্তাদের বাসা পুড়িয়ে দেওয়া এবং কারা অভ্যন্তরের আরও কয়েকটি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, হামলাকারীরা কারা ফটক ভেঙে ৮১টি সরকারি অস্ত্র লুট করে। এ সময় ৮ হাজার ৫০ রাউন্ড গুলি লুট করে। আন্দোলনের নামে কয়েকশ সশস্ত্র জনতা প্রথমে কারাফটকে হামলা চালায়। এরপর তারা কারারক্ষীর ওপর হামলা করে অস্ত্র কেড়ে নেয়। কারা অভ্যন্তরে ঢুকে বন্দিদের মুক্ত করে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে কারাগারে থাকার ৮২৬ বন্দির সবাই পালিয়ে যান। যেখানে ৯ জঙ্গিও আছেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর রাত ৯টা থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪০ ঘণ্টা নরসিংদী মাধকণী শেখেরচড়ের ভগিরথপুর এলাকার ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়ার ৫ তলা ভবন এবং গাংপাড় এলাকার আফজাল হাজির নিলুফা ভিলা নামে দুটি বাড়িতে ‘অপারেশন গর্ডিয়ান নট’ অভিযান চালায় সিটিটিসি। অভিযানে নব্য জেএমবির আব্দুল্লাহ আল বাঙালি (৩০) ও তার স্ত্রী আকলিমা আক্তার মনি (২৮) নিহত হন। ওই সময় ইশরাত জাহান মৌসুমী মৌ এবং খাদিজা পারভীন মেঘলা ওরফে মেঘনাকে গ্রেফতার করা হয়। দুজনই বেসরকারি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির ফার্মেসি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পলাতক অপর ৭ জঙ্গি শিগগিরই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের বাইরে উগ্রপন্থি জঙ্গিবাদে জড়িত ও গ্রেফতার হয়েছিল এমন ২-১ জনকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে এই সংঘটিত সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনার মধ্যে সক্রিয় থাকার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি আমরা। এ বিষয়ে আরও গভীরভাবে কাজ করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নরসিংদী কারাগারে হামলার ঘটনা ও জঙ্গি ছিনতাইকালে যারা নাশকতা চালিয়েছে ও উসকানি দিয়েছে আমরা এরকম ২-১টি গ্রুপকে শনাক্ত করেছি। একজনকে আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) শনাক্ত করেছি, যিনি এর আগে আমাদের হাতে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এ আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সহিংস কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। ইতোমধ্যে তার নাম নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে। অচিরেই তাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারব। এ কারণে আমাদের মনে হচ্ছে, কোটা আন্দোলনে উগ্রপন্থি বা জঙ্গিদের যোগসাজশ বা অংশগ্রহণ থাকলেও থাকতে পারে।