সারা দেশের মতো রংপুরেও সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলসহ ৪ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘অর্জন’ মোড়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এর পরে বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় হয়ে নগরীর প্রবেশদ্বার মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অর্জন মোড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় রাস্তার দু’পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ওই সড়ক পথে প্রায় ২ ঘন্টা যানবাহন চলাচাল বন্ধ হয়ে যায়।
মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা প্রথা কোটা প্রথা-মানি না মানব না’, ‘কোটা প্রথা বাতিল কর-করতে হবে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই' সহ কোটা পুনর্বহালের বিপক্ষে বিভিন্ন স্নোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে তারা চারটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতি জনশুমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাকের হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যারা কোটাধারী মেধাবী পরিচয় দিতে চান, তাদেরকে বলতে চাই, এই পরিচয় খুবই লজ্জার। কোনো বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকতে পারে না। তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার যেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল হাইকোর্ট কেন সেই কোটাকে আবার পুনর্বহাল করল আমরা জানি না। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানা হবে ততক্ষণ আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
অন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শামসুর রহমান সুমন বলেন, এ বৈষম্য আমরা কখনো মানব না। ২০১৮ সালে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সে সময় কোটা পদ্ধতি বাতিল করে। কিন্তু আজকে হাইকোর্ট সেই কোটা পুনর্বহাল করেছেন। সকল যৌক্তিক আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দাবি না মানলে বেরোবির শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছাড়বে না।
সুমন আরো বলেন, কোনও দুষ্কৃতিকারী আমাদের আন্দোলনের মাঝে ঢুকে যেন এটিকে নষ্ট করে না দিতে পারে সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব। প্রতিদিন আমরা একের পর এক কর্মসূচি চালিয়ে যাব।