বন্যার দুর্ভোগের মাঝে সাপের আতঙ্ক
সিলেটে কমছে না পানি, উত্তরে আরও অবনতি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১৬ এএম
ছবি : সংগৃহীত
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। নগরীর নিচু এলাকা থেকে পানি কোনোভাবেই কমছে না। বৃষ্টিপাত কম হলে একটু কমে। বৃষ্টি হলে ফের বেড়ে যায়। এভাবেই জলমগ্ন হয়ে আছে নগরীর উপশহর ও দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজসহ গোটা এলাকা। অন্যদিকে দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জে বন্যার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। এতে মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে স্বপ্নের ভিটেবাড়ি। নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন মানুষজন।
এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যায় বাড়িঘরে পানি উঠায় দুর্ভোগের পাশাপাশি সাপ বিশেষ করে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। এদিকে বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তাদের ভূরিভোজের আয়োজন করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সিলেট : কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির পরিমাণ কোথাও ভারি আবার কোথাও মাঝারি থেকে হালকা। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার আগামী পাঁচ দিনের দেওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে সিলেটের জকিগঞ্জে ৪টি বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ভারত থেকে নেমে আসা পানির কারণে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছেন বাসিন্দারা। নদীর প্রবল স্রোতে বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ। শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস গণমাধ্যমকে জানান, পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বেশ কয়েক জায়গায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে সিলেটের প্রায় ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওসমানীনগর (সিলেট) : ওসমানীনগরে যখন চারদিকে বন্যার অথৈ পানি; চরম দুর্ভোগে দিন-রাত পার করছেন উপজেলার সোয়া দুই লাখ বন্যাকবলিত মানুষ; ঠিক সেই মুহূর্তে উপজেলা হাসপাতালে কর্মকর্তা বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা এবং ভূরিভোজ নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করলেন ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলে অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
গত বুধবার নবাগত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বরণ, দুজন চিকিৎসকের বিদায়, একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও একজন স্বাস্থ্য সহকারীর বিদায় উপলক্ষ্যে জাঁকজমকপূর্ণভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদায় সংবর্ধনা ও ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে হাসপাতাল ও মাঠ পর্যায়ের প্রায় দেড়শ কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশ নেন সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. আনিসুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হয়ে আসেন সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নুরে আলম শামীম, সিলেট সদরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাহিল, বিশ্বনাথের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমনসহ অনেকে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সিলেট থেকে বাবুর্চি নিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। প্রায় দেড়শ জনের খাবারের জন্য রান্না করা হয় মোরগভুনা, রুই মাছ ভাজা, চিংড়ি ভুনা, আলু ও বেগুন ভর্তা, মুড়িঘণ্ট, ডাল। সঙ্গে ছিল দই ও সফট ড্রিঙ্ক। বিষয়টি ছবিসহ ফেসবুকে প্রকাশ পেলে অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
মৌলভীবাজার : অপরিকল্পিতভাবে নদীতীরে ও নিুাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপকারভোগীরা। নদী ও হাওড়ে পানি বাড়লেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র যেতে হয় অসহায় ভূমিহীনদের। আসবাবপত্র, ছোট শিশু ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় এসব মানুষকে।
জানা যায়, মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষ্যে মৌলভীবাজার জেলায় চার ধাপে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তৈরি করা হয়। সে সময় কর্মকর্তারা জেলার একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্প নদীতীরে ও হাওড়ের নিুাঞ্চলে নির্মাণ করেন। যার কারণে সামান্য বৃষ্টি কিংবা বন্যা হলেই এসব ঘরে পানি প্রবেশ করে। আবার কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। চলতি বছর ৩ দফা বন্যায় তাদের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের মাধবপুরে অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোনাই নদীর বাঁধ ভেঙে শতাধিক পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের চাষিরা। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
এদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) : প্রতিবছরই তিস্তা নদীর পানি বাড়লেই নদীতীরের বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটায়। শুষ্ক মৌসুমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনই নদীভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর পাড় ভাঙছে। তীর রক্ষা বাঁধে ধস নামছে। এবারও দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পাশে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহর রক্ষার্থে নির্মিত চন্ডিমারী বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই বাঁধ মেরামত করা না গেলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এতে তিস্তা নদীর গতিপথ উলটো দিয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিস্তা পাড়ের লোকজনের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। কিন্তু এখনো জরুরি কাজ শুরু না হওয়ায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ বাঁধ ভেঙে গেলে হাতীবান্ধা শহরে তিস্তার পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্ট বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের নিুাঞ্চলের ২ শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তবে জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২শ। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বানভাসি পরিবারগুলো বাঁশের মাচা, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অধিকাংশ পরিবারে ৫ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার ফলে ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। অপরদিকে তীব্র স্রোতে কয়েকদিনে অন্তত ২ শতাধিক বাড়ি-ঘর ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শুক্রবার বিকালে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে মাঠে থাকা পাট, আমন বীজতলা, সবজি, তিল, তিসিসহ কৃষিজাতীয় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছে বানভাসি মানুষ। একটু আশ্রয়ের খোঁজে বিভিন্ন উঁচু জায়গায় যাচ্ছেন তারা। নিরুপায় হয়ে অনেকে নৌকার মধ্যে রাত্রিযাপন করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হলেও এখনো সবার কাছে পৌঁছেনি সরকারি সহায়তা।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : রৌমারী ও রাজিবপুরে সার্বিক বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৭৫টি গ্রামের প্রায় ৯০ হাজার চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা অপ্রতুল। করিডর, স্থলবন্দর ও বর্ডার হাটেও পানি উঠেছে। হুমকিতে পড়েছে চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ, ১২ কোটি টাকার বড়াইবাড়ী ব্রিজ, বন্দবেড় বেড়িবাঁধ। চর নতুনবন্দর স্থলবন্দরটিও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) : বৃদ্ধি পাচ্ছে নদ-নদীর পানি। দ্বিতীয় দফা বন্যায় ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে বামনডাঙ্গা, বেরুবাড়ী, কালীগঞ্জ, নুনখাওয়া, কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাষ, নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ও রায়গঞ্জ ইউনিয়নের কিছু এলাকা। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত করছে এবাড়ি-ওবাড়ি। অনেকের ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। দ্বিতীয় দফা বন্যায় ২ হাজার ২শ পরিবারের প্রায় ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : দেওয়ানগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা-ব্রহ্মপুত্র এবং পাহাড়ি নদী জিঞ্জিরামসহ সবকটি পয়েন্টে শুক্রবার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজান থেকে পানি নামতে থাকায় নিুাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড এলাকা, উপজেলা পরিষদ, পৌরশহরের প্রধান সড়ক, বেলতলী বাজার বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে। এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সানন্দবাড়ী ডিগ্রি কলেজ, কাঠারবিল এমএম কলেজ জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পৌর এলাকার চুকাইবাড়ী চিকাজানীসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক বানভাসি লোকজন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। দেওয়ানগঞ্জ প্রায় ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে অঘোষিত ছুটি।
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ৮০ বছরের বৃদ্ধ ঝরু এবং তার স্ত্রী মালিকান বলেন, ‘আমাদের বাড়ি যমুনার তীরবর্তী চাকুরিয়া গ্রামে। একদিন এক রাত পানিবন্দি ছিলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। রাতে ১০ টাকা দিয়ে বিস্কুট কিনে খাইছিলাম। সারাদিন খাওন নাই। অন্যের থেকে চারটা ভাত আইনা খাইতাছি। ভাত আছে তরকারি নাই।’
শেরপুর : উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্রতিমুহূর্তে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার ও নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের কমপক্ষে ৪০টি গ্রামের নিুাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা পাহাড়ি ঢলের ঘোলা পানিতে থৈ থৈ করছে। অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। রোপা আমন বীজতলা ও সবজিখেত তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের এলাকা পানিতে একাকার হয়ে যাওয়ায় চুলা জ্বালিয়ে রান্নাবান্নার কাজ করতে পারছেন না। অনেকে গবাদিপশুসহ হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় হাঁটুপানি মাড়িয়ে এবং ডিঙি নৌকায় চলাচল করছেন।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : চরাঞ্চলসহ যমুনার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। বিগত বছর ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল বেঁচে ছিল, সেটিও ভাঙনের আশঙ্কায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ।
মাদারগঞ্জ (জামালপুর) : মাদারগঞ্জে ৭টি ইউনিয়নের নিু০াঞ্চলের শত শত হেক্টর পাট, আমন ফসল ও সবজিখেত তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নাদাগাড়ী অশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫টি পরিবার। বৃহস্পতিবার রাতে বালিজুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোড় নামক স্থানে একটি উঁচু কাঁচা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সুখনগরী, নাংলা, ফুলজোড়, নাদাগাড়ী ও পশ্চিম সুখনগরী গ্রামসহ অন্তত ৮ গ্রামের লোকজনকে উপজেলা সদরে আসতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া চরপাকেরদহ গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে।
টাঙ্গাইল : যমুনা নদীসহ জেলার সবগুলো নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চচলের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যাকবলিত হওয়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে সাপের আতঙ্ক। বিশেষ করে রাসেলস ভাইপার সাপের কারণে বেশি আতঙ্কিত মানুষজন।
গত বুধবার জেলার কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুরে পাকা সড়ক ভেঙে পানি ঢুকেছে জনপদে। গোবিন্দাসী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সকালেই বাজারের একাংশে পানি প্রবেশ করেছে। খালটি যদি দখলমুক্ত আর ময়লা আবর্জনায় ভরাট না থাকত তাহলে পানি বাজারে উঠত না।
রাজবাড়ী : পদ্মার পানি বেড়ে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকাসহ আশপাশের বাড়িঘর রয়েছে হুমকির মুখে। লঞ্চঘাটের পাশের বাসিন্দা সোহরাব শেখ বলেন, যেভাবে হুহু করে পানি বাড়ছে তাতে আমাদের বাড়িঘরে থাকাটা মুশকিল হয়ে যাবে। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট মালিক সমিতির ঘাট প্রতিনিধি মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, পানি ও বৃষ্টির কারণে লঞ্চঘাট এলাকা অনেকটাই হুমকির মুখে রয়েছে।
বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : চৌহালীতে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন অব্যাহত আছে। গত দুদিনে চৌহালীর খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের কোদালিয়া মরা নদীতে পানির তীব্র স্রোতে বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। চরছলিমাবাদে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে যমুনার পশ্চিমপাড় এনায়েতপুরের দক্ষিণে বন্যা ও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ও অন্যান্য সহায়তার বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।