ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একের পর এক জালে তুলছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানের পর এবার আরেক কর্মকর্তার বিপুল অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। অবৈধ আয়ে ঢাকায় একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক স্পেসসহ বিপুল সম্পদ অর্জনকারী এই কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ এনামুল হক। সিলেটের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনার হিসাবে কর্মরত তিনি। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তার বিপুল স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। খোদ কাস্টমস বিভাগের অনেকেই বলেছেন, মতিউরের পথে হেঁটেই বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এনামুল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুদকের বিশেষ পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, বৃহস্পতিবার দুদকের উপপরিচালক ফারজানা ইয়াসমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত কাস্টমস কর্মকর্তা এনামুল হকের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।
দুদকের করা আবেদনে বলা হয়েছে, ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মোহাম্মদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি তার মালিকানাধীন ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এটা করতে পারলে এ মামলার চার্জশিট দাখিল, বিচার শেষে সাজার অংশ হিসাবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। তাই মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর, আদালতের বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুবিধার্থে, সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, তার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা একান্ত প্রয়োজন। এই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এনামুলের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন।
এনামুল হকের যেসব সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছেÑগুলশানের জোয়ার সাহারায় ৬১ লাখ টাকার তিন কাঠা জমি, খিলক্ষেতে ৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকার ৩৩ শতাংশ জমি, কাকরাইলের আইরিশ নূরজাহানে কমনস্পেসসহ ১ হাজার ১৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা, একই ভবনে কারপার্কিংসহ ১ হাজার ৮৩৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। যার মূল্য ৫১ লাখ ২৯০০ হাজার টাকা।
এছাড়া কাকরাইলে ১ হাজার ৯০০ বর্গফুট ও ৩ হাজার ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট (কারপার্কিংসহ) রয়েছে। যার মূল্য ২ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাজীপুরে আছে ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকার পাঁচ কাঠা জমি। মোহাম্মদপুরে তিনটি বাণিজ্যিক ভবনে আছে চার হাজার বর্গফুট আয়তেনর তিনটি কর্মাশিয়াল স্পেস। যার প্রতিটির মূল্য ৭১ লাখ ৩৫ হাজার করে। মোহাম্মদপুরে ১০ হাজার ৯৬৫ বর্গফুটের আরও একটি বাণিজ্যিক স্পেস রয়েছে, যার মূল্য দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া অভিজাত এলাকা গুলশানে ৭২ লাখ টাকার ২ হাজার ৪২৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং বাড্ডায় ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দামের চার কাঠা নাল জমি রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৩১ জুলাই প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মোহাম্মদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। মামলায় আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০৭ টাকা থাকার অভিযোগ আনা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, এনামুল হক দুদককে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৩ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সংস্থাটির অনুসন্ধানে ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০৭ টাকার সম্পদ অবৈধ বলে প্রমাণিত হয়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, এই কাস্টমস কর্মকর্তা অবৈধ আয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক ভবনে ফ্লোরসহ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার গুলশানে ৩ কাঠা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩ কাঠা ও একই স্থানে আরও তিন কাঠার প্লট কেনেন এনামুল। বসুন্ধরার একটি প্লটের ওপর নির্মিত নয়তলা ভবনও রয়েছে তার। এই ভবনের নির্মাণ ব্যয় দুই কোটি টাকারও বেশি বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে ২০ কাঠা ও ফেনীর সোনাগাজীর দুটি স্থানে জমি কেনেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
গাজীপুরের চান্দনায় ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ৫ কাঠা জমি কিনেছেন এনামুল। এছাড়া তার নামে ঢাকার শ্যামলী স্কয়ার ও সন্ধানী টাওয়ারেও দুটি বাণিজ্যিক ফ্লোর পাওয়া যায় অনুসন্ধানকালে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৭ জুলাই দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠা প্লট ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ফয়সাল ও তার আÍীয়স্বজনের নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাব ফ্রিজ করার আদেশও দেওয়া হয়।