আলোচনা প্রত্যাখ্যান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি অব্যাহত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম
আলোচনা বর্জন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি অব্যাহত
বিদ্যুৎ বিভাগের লিখিত মাইনর্স প্রতিপালন না করে আলোচনা আহবান করায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আলোচনা বর্জন করেছেন সারা দেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই সঙ্গে চলমান কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে এজিএম রাজন কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্মার্ট ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিনির্মাণে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহকে একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিতকরণের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে পূর্বের ন্যায় জরুরি বিদ্যুৎ সেবা সচল রেখে কর্মবিরতি চলমান রয়েছে।
একই দাবিতে গত ৫ মে থেকে কর্মবিরতি শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে ১০ মে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের (রুটিন দায়িত্ব) উপস্থিতিতে আলোচনায় বসা হলে যৌক্তিক যে কোনো দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে নিম্নোক্ত দুই শর্ত সাপেক্ষে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।
১. এই ইস্যুতে বরখাস্ত, সংযুক্ত, স্ট্যান্ড রিলিজকৃত সকল কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের অব্যাহতি দিয়ে স্ব স্ব কর্মস্থলে পুনর্বহাল করতে হবে।
২. প্রত্যেক স্তরের এমপ্লয়ির প্রতিনিধিসহ ১৫ দিনের মধ্যে দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত আলোচনা সভায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রতি কোনো আস্থা নাই মর্মে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ হতে অবগত করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ হতে সুষ্ঠু সমাধানের দায়িত্ব নেন এবং বরখাস্তসহ সকলকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা প্রদান করেন। সিনিয়র সচিবের সাথে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৭ হাজার ৫৪২ (সাইত্রিশ হাজার পাঁচশত বিয়াল্লিশ) জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনা বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও প্রস্তাবনার আলোকে আলোচনা বা কোনো ধরনের উদ্যোগ/ ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাময়িক বরখাস্তকৃত ২ জন এবং স্ট্যান্ড রিলিজ থাকা ২ জন কর্মকর্তাকে অদ্যাবধি অব্যাহতি দিয়ে নিজ কর্মস্থলে পুনর্বহাল করা হয় নাই।
বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার বাপবিবো-এর চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হলেও তিনি আমাদের সাথে দেখা করেন নাই বা ব্যবস্থা নেন নাই। এমনকি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এই ইস্যুতে প্রতিটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা/ হয়রানির উদ্দেশ্যে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের তালিকা সংগ্রহ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত ৮ জুন ভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জিএম/জিএমকে নিয়ে ঢাকায় একটি সভা করে বর্ণিত বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে; যা শুধুমাত্র সিনিয়র জিএম/জিএমগণের নিজস্ব বক্তব্য, প্রত্যেক স্তরের এমপ্লয়ির বক্তব্য নয় এবং গত ১০ মে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের বরখেলাপ। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪০ হাজার কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এই নিয়ম বহির্ভূত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেওয়া হয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করা হয়।
পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গত ২২ জুন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড সভাপতিকে নিয়ে ঢাকায় আরও একটি সভা করে এবং আমাদেরকে প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন উষ্কানিমূলক নির্দেশনা প্রদান করেন; যা বিদ্যুৎ বিভাগের ১০ জুন লিখিত সিদ্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক। সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে গ্রাহক ও সমিতির মত প্রকাশের অধিকার ক্ষুন্ন করে জবাবদিহিতার উর্ধ্বে গিয়ে গ্রাহক ও সমিতিকে ব্যাপকভাবে শোষন করা জন্য “BREB ACT 2013” এর কিছু ধারা সংশোধন ও সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়াও গত ১৫ ডিসেম্বর সমিতির কর্মচারী চাকরি বিধি যুগোপযোগী করার নিমিত্তে একটি কমিটি গঠিত হলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি জানা যায়নি কিংবা সমিতিগুলোর সাথে কোনো শুনানি হয়নি। ঠিক একইভাবে চলমান বৈষম্যগুলোর ব্যাপারে সমিতির কর্মকর্তা/ কর্মচারীগণ বিভিন্ন সময় প্রতিক্রিয়া দেখালে এরকম ডজনখানেক কমিটি গঠিত হলেও কোনটাই আলোর মুখ দেখেনি।
সামগ্রিক বিষয়ে কোনো সুরাহা না পাওয়ায় এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিনিয়ত সমিতির কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের প্রতি তাদের নীল নকশার অংশ হিসেবে চলতি দায়িত্ব থেকে নিয়মিত না করা, ভবিষ্যতে পদোন্নতি আটকে দেওয়া, হয়রানিমূলক বদলি করা ইত্যাদি হুমকি-ধমকির মাধ্যমে হয়রানি বৃদ্ধি করায় দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ গত ৩০ জুন থেকে পুনরায় কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কর্মসূচি ঘোষণার পর বাপবিবো কর্তৃক বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে প্রধান অতিথি করে আগামী ৫ জুলাই সভা অনুষ্ঠানের একটি দপ্তরাদেশ জারি করা হয়; যেখানে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিনিয়র জিএম/জিএম ও সমিতির বোর্ড সভাপতিগণের সাথে সভা এবং কমিটি গঠনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
সমিতির জন্য বাপবিবো’র চরম বৈষম্যমূলক পলিসি প্রণয়ন, নিম্ন-মানের মালামাল দিয়ে ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে গ্রাহক হয়রানি করা, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা, সর্বোপরি সমিতি ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং উপর্যুক্ত ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে আরইবির প্রতি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আস্থা হারায়।
এমতাবস্থায়, যেহেতু বাপবিবো কর্তৃক গত ১০ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সকল সিদ্ধান্ত অমান্য করা হয়েছে, সেহেতু বাপবিবো’র আয়োজনে আগামী ৫ জুলাইয়ের আলোচনায় বসতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে অনীহা জ্ঞাপন করা হলো। অর্থাৎ সমিতির কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী ওই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়।
সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ বিদ্যুৎ বিভাগের উপর আস্থাশীল। উল্লিখিত সাময়িক বরখাস্ত ২ জন এবং স্ট্যান্ড রিলিজ থাকা ২ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নিজ কর্মস্থলে পুনর্বহালপূর্বক বিদ্যুৎ বিভাগ হতে সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের ২ দফা প্রস্তাবনার বিষয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সমাধানের নিমিত্তে বৈঠকে বসার উদ্যোগ নেওয়া হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ আস্থার সাথে আলোচনায় বসতে সদা প্রস্তুত আছে।