আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা
সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই : স্পিকার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম
ফাইল ছবি
নানা প্রতিবন্ধকতায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা। এর অন্যতম হচ্ছে দক্ষতা ও সক্ষমতার অভাব, বিনিয়োগের অপ্রতুলতা, গবেষণা না থাকা, অধিক জনসংখ্যার চাপ, দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিতভাবে সমুদ্রসম্পদ আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তন, কোস্টাল ইকোসিস্টেম রক্ষা না হওয়া, দূষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাব।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সব পক্ষের সমন্বিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
রাজধানীতে সুনীল অর্থনীতি নিয়ে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বুধবার বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আয়োজনের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদের সঠিক ধারণা ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।
সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, টেকসই অর্থনীতির জন্য টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনা জরুরি। পাশাপাশি শুধু মৎস্য আহরণই নয়, জ্বালানি, কৃষি, পণ্য পরিবহণ ও পর্যটনসহ সমুদ্রকেন্দ্রিক অন্যান্য বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আলাদা একটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ গঠন করতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জিইডি সদস্য (সচিব) ড. কাওসার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম, প্রতিমন্ত্রী মো. শহিদুজ্জামান সরকার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়ং। বক্তৃতা করেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। এরপর দিনব্যাপী ৮টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব অধিবেশনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সমুদ্রে খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ব্লু কার্বনের অপার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে সরকারকে টেকসই এ খাত কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্রসম্পদের সঠিক ব্যবহারে আধুনিক টেকনোলজি, ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় প্রয়োজন। সমুদ্রের ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় সহায়তা প্রয়োজন। যেমন বে-টার্মিনাল প্রকল্পে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। এ রকম সমুদ্রকেন্দ্রিক বড় বড় অবকাঠামো ও গবেষণায় উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, বেসরকারি খাত ও গবেষকদের সমন্বয়ে সমুদ্রসম্পদকে টেকসইভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গেলে ব্ল–-ইকোনমি কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। এটি অর্থনীতির লাইফলাইন হতে পারে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সমুদ্র ঘিরে আমরা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে কাজ করছি।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই সমুদ্র নিশ্চিত করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসাইন বলেন, এখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে কাজ চলছে। এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়ং বলেন, বাংলাদেশে টেকসই অর্থনীতির জন্য সুনীল অর্থনীতির বিকল্প নেই। এডিবি এ খাতে সহায়তা দেবে।
বিভিন্ন অধিবেশনে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রমুখ।
সমুদ্রের জ্বালানিসম্পদ বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেন, সমুদ্রে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এটি শেষ হবে। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে। এখানে এলএনজি টার্মিনাল, কোল টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনালের চিন্তা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এছাড়া সেখানে হাইড্রোজেন পাওয়ারের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ হবে। জলবিদ্যুতে ভালো সম্ভাবনা থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সামিটের এফএসআরইউ সচল হলে ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে গ্যাস সংকট কমে আসবে।
ভিন্ন অধিবেশনে জাতীয় সংসদ-সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কাজ করছে। এতে সমুদ্রের ক্ষতি হবে। তাই সুনীল অর্থনীতি কাজে লাগাতে একটি আলাদা মন্ত্রণালয় বা বিভাগ গঠন করা জরুরি।