দুর্নীতি করে কিছু কর্মকর্তা বদনাম হয় সবার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
ফাইল ছবি
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি করেন না। বরং কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করেন। কিন্তু তাদের কারণে সবার বদনাম হয়।
তিনি বলেন, বিধিবিধান অনুযায়ী দুর্নীতিবাজদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত প্রক্রিয়া বেশ লম্বা। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চাকরিতে বহাল রেখেই তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হয়। আমরা তো চাইলেই কাঠামোর বাইরে যেতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, হবেও না। তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না। বরং প্রশাসনের সবাই দুর্নীতি তদন্তে সহায়তা করছে।
সোমবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কি দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিয়ে কোনো কথা বলেছে। তাদের পক্ষে কি কেউ সাফাই গাইছে। দুর্নীতিবাজদের কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে না। হ্যাঁ প্রশ্ন করতে পারেন এত কঠোর অবস্থানে থাকার পরও কী করে দুর্নীতি হচ্ছে। কীভাবে দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে, তাদের নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে জনবল কাঠামোর সমস্যা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ধরুন দুর্নীতির ১০টি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে ১০ জন পরিদর্শক নেই। একজনকে অনেক বিষয় তদন্ত করতে হয়। ফলে অনেক সময় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, দেশে দুর্নীতি দমনে নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করে। সব প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন এক নয়। মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতিবাজদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার যে প্রক্রিয়ায় করে. দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেই প্রক্রিয়ায় বিচার করে না। আবার আদালত যেভাবে বিচার করে, প্রশাসন সেভাবে করে না। সুতরাং নানা মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের দুর্নীতি দমনের বিষয়ে কাজ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ার পর যদি কোনো কর্মকর্তাকে স্বপদে বহাল রাখা হয়, তাহলে আমাকে জানাবেন। আমি প্রয়োজনে আবার তদন্ত করব।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির এজেন্সি খুলে বসেছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবকে প্রশ্ন করুন তারা জবাব দেবেন। তারা এ বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য কনসার্ন। দুর্নীতির খবর গমাধ্যমে এলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে, তাহলে প্রশাসনে কর্মরতদের কাজ কীÑএমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, পত্রপত্রিকায় যারা লিখেন তাদের ধন্যবাদ। তারা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। তবে গণমাধ্যমের জানার বাইরেও অনেক অনেকের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা তদন্ত হয় এবং হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বর্তমানে কত কর্মকর্তার অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করছে।
১৯৭৯ সালের গণকর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা কি কার্যকর আছেÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বিষয়টি আমার এ মুহূর্তে জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো আদেশ জারি করেছে কি না। পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ হ্রাস বৃদ্ধি উলেখ করে সম্পদবিবরণী সরকারের কাছে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছেÑআপনার সম্পদের হিসাব দিয়েছেন কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাব সচিব এড়িয়ে যান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, নিয়মিত বিষয়ের বাইরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে যতœ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যতেœর সঙ্গে নজরদারির ভিত্তিতে, দ্রুততার সঙ্গে, নিপুণতার সঙ্গে, স্বচ্ছতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। মাহবুব হোসেন বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে মন্ত্রী ও সচিব সবাইকে মনোনিবেশ করতে বলেছেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিষয়ে সচিব জানান, পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে একটি শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। এ বৈঠকে পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স কোম্পানি (পিএলসি) শিরোনামে কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির মূল দায়িত্ব থাকবে পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ। কোম্পানির ১৪ জনের বোর্ড অব ডিরেক্টর থাকবে। রেল মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ ও সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিনিধি থাকবেন। কোম্পানি আইন অনুযায়ী তারা চলবে এবং জনবল কাঠামো তারা অনুমোদন দেবে। বর্তমানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার পরই কোম্পানি বাস্তবায়ন হবে। তখন সেতুর টোলও নবগঠিত কোম্পানি আদায় করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। তবে প্রধানমন্ত্রীর নামে এটি স্থাপনের বিষয়ে ‘না’ বলেছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে হচ্ছে ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি। ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাণিজ্যনীতি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সাচিব।