মানব পাচার
লিবিয়ায় নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের হোতা গ্রেফতার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বাংলাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বহু মানুষ। এসব মানুষের অনেকেই মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত ও নিঃস্ব। এমনই এক চক্রের হোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার নাম মোহাম্মদ মাহাবুব পাঠান।
সোমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান। চক্রের বাংলাদেশি অন্যদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানায় সিআইডি।
‘তিস্তা চুক্তির বিষয়ে মমতাকে ‘হ্যাঁ’ বলাতে হবে’
আজাদ রহমান জানান, সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশে শুক্রবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহাবুবকে গ্রেফতার করা হয়। অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের ১৭ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে মাহাবুব পাঠান চক্রের শিকার ৬৪ বাংলাদেশিসহ ১০৪ জন অভিবাসী তিন সপ্তাহ ধরে ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হন। তাদের মধ্যে ভুক্তভোগী মিলন বেপারী শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় মাহাবুবকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মাহাবুব দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে লিবিয়ায় অবস্থান করে বেনগাজীর বাংলাদেশি কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার আড়ালে মানব পাচার চক্র পরিচালনা করছিলেন। চক্রটি বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে আটক করত। এরপর তাদের আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করে সেই ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠাত এবং মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ আদায়ের পর বিপজ্জনক নৌযাত্রার মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করত।
শাহীনের বাসায় ফের ডিবির অভিযান
মিলনের করা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, চক্রটি মিলনসহ অন্য ভুক্তভোগীদের বিমানযোগে লিবিয়ার বেনগাজী নিয়ে যায়। বেনগাজীতে মূলহোতা মাহাবুব ও তার সহযোগীরা মাহাবুবের ক্যাম্পে তাদের আটক রাখে এবং শারীরিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
২০২১ সালের ২ মে মিলনের মা বিউটি আক্তার ও চাচি মনি বেগম আসামিদের দেওয়া ব্যাংক হিসাবে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৮২০ টাকা দেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে নগদ চার লাখ টাকা দেন। এরপর আসামি মাহাবুব ও তার সহযোগীরা সুকৌশলে মিলনসহ অন্য ভুক্তভোগীদের ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলিতে এই চক্রের সক্রিয় সদস্য মনিরের ক্যাম্পে পাঠায়।
রিসোর্টে অসামাজিক কর্মকাণ্ড, নারীসহ গ্রেফতার ১০
সেখানে বাদী মিলন ও ভুক্তভোগীদের আটক করে দ্বিতীয় দফায় শারীরিক নির্যাতন করে টাকা দাবি করে। ২০২১ সালের ১২ মে বিউটি ও মনি আবারও হেনা বেগমের কাছে নগদ চার লাখ টাকা দেন। এভাবে মিলনের পরিবার মোট ১০ লাখ টাকা দেয় চক্রটিকে। ১৫ দিন সেখানে আটকে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরে হাওয়ায় (বাতাসে) ভরা একটি প্লাস্টিক নৌকায় আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলনকে তুলে দেওয়া হয়।