‘বিচারের জন্য ঘুরতে ঘুরতে মানুষের জীবন শেষ’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
ফাইল ছবি
আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য পংকজ নাথ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান অধিকার রক্ষায় কমিশন গঠনের দাবি জানান। এ সময় বিরোধী দলের সংসদ-সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আইন বড়লোকের জন্য। বিচারকের অভাব রয়েছে। বিচারের জন্য এই দরজা, ওই দরজায় ঘুরতে ঘুরতে মানুষের জীবন শেষ। তিনি প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করার দাবি জানান। স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুন্দর সুন্দর ভবন হয়েছে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ আদালতে ঘুরছেন। মামলাজট বাড়ছে।
বিভিন্ন আদালতে মামলা জট ৪১ লাখ ৯ হাজার : আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশের বিভিন্ন আদালতে ৪১ লাখ ৯ হাজার ৭৫৫টি মামলা রয়েছে। জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আইন ও বিচার বিভাগ খাতে বরাদ্দের ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদ সদস্যদের দেওয়া বক্তব্যের পর আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সংসদ-সদস্য যারা ছাঁটাই প্রস্তাব করেছেন, তারা অত্যন্ত যুক্তিসংগত কথা বলেছেন, মামলা জটের কথা বলেছেন। মামলা জটের কথা অস্বীকার করার কিছু নেই। আজকের হিসাব হচ্ছে ৪১ লাখ ৯ হাজার ৭৫৫টি মামলা আদালতে আছে। যতগুলো মামলা আছে তার নিষ্পত্তি করার জন্য বিচার বিভাগে যে বিচারক আছে তা অপ্রতুল।
২০০৯ সালে জুডিশিয়ারির সক্ষমতা ছিল ৮০০ বিচারক। আজকে সেই জুডিশিয়ারির সক্ষমতা হচ্ছে প্রায় দুই হাজার বিচারক। আমরা আরও আদালত বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। ১৫৮টি আদালত শিগগিরই বেড়ে যাবে।
মামলাজট নিরসনে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প নিয়ে ৬৪ জেলায় এ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসি আদালত স্থাপনের পরিকল্পনা নেন। তার মধ্যে ৪১টি হয়ে গেছে, ২৩টি হচ্ছে ও শিগগিরই হয়ে যাবে। ছাঁটাই প্রস্তাব গ্রহণ করতে না পারার যুক্তি তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, যে দুই হাজার ২২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আমার এই পুরো টাকাই লাগবে। আপনাদের এটা বলতে পারি এ টাকা দিয়ে যতটুকু সম্ভব এ দুঃখী মামলা যারা করেন তাদের কষ্ট নিবারণ করার চেষ্টা করব।
জোবরা গ্রাম কি আগের মতো আছে : সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, জোবরা গ্রাম কি আগের মতো আছে? সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে যেখানে শুরু হয়েছিল ড. ইউনূস ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প বা গ্রামীণ ব্যাংক। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের নামে গরিব মানুষের কাগজে-কলমে বলছেন সাড়ে ১২ শতাংশ। ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহে ২৫০ টাকা। প্রথম কিস্তিও ২৫০ টাকা, শেষ কিস্তিও ২৫০ টাকা। চারবার মাল্টিফ্লাই করেন, তাহলে দেখবেন কত শতাংশ সুদ আসে? প্যাকেজেজ লিমিটেডে ঋণ নিলেন ৫ শতাংশ সুদে। ইউনূস সাহেবের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিল ৩৫ শতাংশ, যেটা ৫ শতাংশের কম সুদে। আমাদের কথা হচ্ছে, জোবরা গ্রাম কি আগের মতো আছে নাকি বদলে গেছে?
পংকজ নাথ বলেন, বিএনপি-জামায়াত-প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ব্যাঙের ছাতার মতো যে এনজিওগুলো আছে, সেগুলো তদন্ত করে বন্ধ করা হোক। এনজিওগুলো গরিব মানুষের সন্তানদের জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় করেছে কি না, জানতে চেয়ে পংকজ নাথ বলেন, গরিব মানুষের রক্তচোষা পয়সা যেন কারও কারও ব্যক্তিগত কোষাগারে জমা না হয়।
জবাবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান নয়। এটি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। যেভাবে বিশ্বে পরিচয় দেওয়া হয়, তা সঠিক নয়। যদিও এরপর নানা রকম ব্যবসায় প্রসারিত করেছে তার চার্টারের বাইরে গিয়ে। তিনি বলেন, সমাজকল্যাণে নিবন্ধিত কোনো এনজিও বেআইনি কাজ করলে তার বিরুদ্ধে তথ্য দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।