বিআইডিএস’র সেমিনারে বক্তারা

দেশ টিকিয়ে রাখলেও কৃষির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা আছে

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
৩০ জুন ২০২৪, ০৯:৪২ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ
শায়েখ সিরাজ
ছবি : সংগৃহীত

দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কৃষি। দেশকে টিকিয়ে রেখেছে এ খাত। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিবারভিত্তিক কৃষির বিলুপ্তি এবং এখাতে পুঁজির বিকাশ ঘটায় আগামীতে কৃষির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি জমি কমে যাওয়া, কাঙ্ক্ষিত যান্ত্রিকীকরণ না হওয়া এবং জমি টুকরো টুকরো হওয়াসহ নানা কারণে কৃষি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে এখন উৎপাদন বাড়লেও নিরাপদ খাদ্য কতটা নিশ্চিত হচ্ছে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। 

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে ‘লিডিং ইস্যুজ ইন অ্যাগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, বিআইডিএসের সিনিয়র ফেলো ও চ্যানেল আাইয়ের হেড অব নিউজ শাইখ সিরাজ। 

অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, শিক্ষাবিদ কাজী ফারুক, গবেষক ড. মনজুর হোসেন প্রমুখ।

ড. শামসুল আলম বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে কৃষি। কৃষি উৎপাদও ভালো হলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করা যায়। কিন্তু কৃষি খাতে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় অনানুষ্ঠানিক খাত। এটির বিভিন্ন খাত ও উপখাতে প্রতিনিয়ত ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। অন্তঃ এবং আন্তঃ খাতে ঘটছে ব্যাপক রূপান্তর। সামষ্টিক কৃষির অবকাঠামোগত রূপান্তর করে মূল্য সংযোজন করতে হবে। তবে ধানের ক্ষেত্রে মাছ চাষ কিংবা আমের বাগান হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কৃষক তার সৃজনশীলতা দিয়েই অনেক কিছু করতে পারে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। 

কৃষি পণ্যের উচ্চ মূল্য এবং বাজার ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষি পণ্যের দামের একটা উঠানামা থাকবে। এটাই এর বৈশিষ্ট্য। টুথপেস্ট তো সারা বছর একই দাম থাকে। কিন্তু পচনশীল পণ্য হিসেবে মৌসুম, সময় বা চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কৃষি পণ্যের দাম বাড়া কমা থাকবেই। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যদি ৫০ শতাংশ দামের পার্থক্য না থাকে তাহলে এ পণ্য লাভজনক হবে না। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে। তবে সরকার যেটা করতে পারে সেটি হলো পরিবহণ খরচ কীভাবে কমিয়ে রাখা যায়, পণ্য পরিবহণ কীভাবে নির্বিঘ্ন করা যায় বা ট্রাক চালকরা অত্যধিক ভাড়া নিচ্ছে কিনা এসব বন্ধ করতে কাজ করতে পারে। 

শাইখ সিরাজ বলেন, উৎপাদন ও চাহিদার তথ্যের মধ্যে গরমিল আছে। সেটি না হলে আমাদের কেন প্রতিবছর চাল আমদানি করতে হয়? দেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণা সময়োপযোগী হচ্ছে না। কেননা তারা যেসময় গবেষণা করে সেটি মাঠ পর্যায়ে যেতে যেতে বহুবছর সময় লেগে যায়। এর মধ্যে আবার মাঠের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। এজন্য গবেষণায় আরও বেশি মনোযোগ এবং বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

ড. আব্দুস ছাত্তার মন্ডল বলেন, আমাদের কৃষি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কেননা প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটার পরও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না কৃষিতে। আমাদের জমির আয়তন কমছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে খণ্ডায়নও। পরিবারভিত্তিক কৃষি কমে যাচ্ছে। তরুণরা খামার ব্যবস্থায় থাকছে না। পারিবারিক কৃষি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। 

ড. বিনায়ক সেন বলেন, কৃষি পণ্যের বাজারে যেখানে দামের উঠানামা হয় এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে নাকি যারা এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত তারা আরও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে সেসব বিষয় নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন