Logo
Logo
×

জাতীয়

সংসদে অর্থবিল পাশ, কালোটাকা সাদার সুযোগ থাকছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৪০ পিএম

সংসদে অর্থবিল পাশ, কালোটাকা সাদার সুযোগ থাকছে

প্রতীকী ছবি

সংসদ-সদস্য ও সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও কালোটাকা সাদা করার বিশেষ সুবিধা (ট্যাক্স অ্যামনেস্টি) রেখে শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাশ হয়েছে। 

বিত্তবানদের বোঝা কমাতে সর্বোচ্চ কর হারে ছাড়, সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানির গাড়ির সারচার্জ বাতিল করা হয়েছে। 

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি ও কর অবকাশ সুবিধা বহাল রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। 

খিলক্ষেতে বাগানবাড়িতে গৃহবধূকে রাতভর আটকে গণধর্ষণ

শনিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে পাশ হয় এ বিলটি। এদিন বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের। 

পরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রণীত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় অর্থবিলের ওপর কয়েকজন সদস্যের আনা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বাকিগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। পরে অর্থমন্ত্রী অর্থবিল পাশের অনুরোধ জানালে স্পিকার তা ভোটে দেন। এ সময় উপস্থিত সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাশ হয় অর্থবিল।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের লক্ষ্যে ৩০ জুনের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাদের কর সুবিধা অব্যাহত রাখব। 

বাংলাদেশে নিবন্ধিত সম্পূর্ণ নতুন কোম্পানি হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করে ২০৩৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করলে তাদেরও ১০ বছরের জন্য নির্ধারিত হারে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। 

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার ট্যাক্স অ্যামনেস্টি। 

সংসদে ও সংসদের বাইরে সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি সত্তে¡ও এ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। 

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা কালোটাকা সাদা নয়। এখন দেশে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। ঢাকা শহরে যার এক কাঠা জমি আছে সেই কয়েক কোটি টাকার মালিক, এসব জমিতে অনেক সময় কিছু করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। 

তারা সেটার আয়কর দিতে পারেন না। তারা যাতে আয়কর দিয়ে মূল ধারায় ফিরে আসেন, মানে আয়কর দিয়ে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে আর না করেন, সেজন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। 

অতীতে খালেদা জিয়াও এই সুযোগ নিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেন নিয়েছিলেন এবং আরও অনেকে নিয়েছিলেন। তারাও কিন্তু এরকমভাবে সেই ২০০৭-২০০৮ বা তার পরবর্তীতে টাকা বৈধ করে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির সাইফুর রহমানও করেছেন। এরশাদ সাহেবও বোধ হয় করেছিলেন।  

অন্যদিকে অর্থবিলের মাধ্যমে বিত্তশালীদের আয়করে বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সে অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। সংসদ-সদস্যের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ কর হার আগের মতোই ২৫ শতাংশ রাখেন তিনি। 

তবে আয়করের স্লাবে পরিবর্তন করায় বিত্তশালীরাই বেশি সুফল ভোগ করতে পারবেন। যেমন আগে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হতো। নতুন নিয়মে, ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এতে সুফল পাবেন মোটা বেতনের চাকরিজীবী ও বিত্তশালীরা। পক্ষান্তরে নানা মহলের দাবি সত্বেও ও করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। 

অন্যদিকে বিত্তবানদের গাড়িতেও কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। সমাজের বিত্তবানরা সাধারণত নিজ নামে গাড়ি কেনেন না। তারা কোম্পানির নামে কেনা গাড়ি ব্যবহার করেন। কোম্পানির নামে কেনা গাড়ির সারচার্জ মওকুফ করে তাদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।  পক্ষান্তরে অনেক মধ্যবিত্ত একাধিক গাড়ি নিজ নামে কিনে রেন্ট-এ-কার বা উবার-পাঠাও এ ভাড়ায় চালান। তারা এ সুবিধা পাবেন না।  তাদের পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে। যে গাড়ির সিসি বেশি সেই গাড়িতে দ্বিগুণ হারে উৎসে কর দিতে হবে সারচার্জ হিসাবে।  সরকারি গাড়ির পরিবেশ সারচার্জও বাতিল করা হচ্ছে। 

কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনী আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হয়েছে। আর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত থাকছে। তবে মূলধনী আয় ৫০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। 

এক্ষেত্রে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে গেইন ট্যাক্স আদায় করা হবে। প্রথমত, শেয়ার কেনার ৫ বছরের মধ্যে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলে ব্যক্তি করদাতার স্ল্যাব অনুযায়ী ট্যাক্স দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি শেয়ার কিনে ৬ মাস বা এক বছর পর বিক্রি করে ৫১ লাখ টাকা মুনাফা করলেন। এক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। তাকে এক লাখ টাকার ওপর গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এই এক লাখ টাকা করদাতার মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং করদাতাকে স্ল্যাব অনুযায়ী আয়কর পরিশোধ করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, ওই ব্যক্তি শেয়ার কিনে ৫ বছর পর একই মুনাফা করলে তার করের হিসাব হবে ভিন্ন। এক্ষেত্রেও তার ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি এক লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ১৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।
 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম