সংসদে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ
সরকারি কর্মকর্তাদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতিতে জড়িত
সংসদ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:১৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশ দুর্নীতিতে যুক্ত বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।
তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরিতে ঢোকার সময় যদি হলফনামা দিতেন, তারপর পাঁচ-দশ বছর পর হলফনামা দিতেন এবং তাদের আলোচনা-সমালোচনা হতো তাহলে দুর্নীতির চাবিটা বন্ধ হতো। না হলে বন্ধ হবে না।
শনিবার জাতীয় সংসদের অর্থবিলের ওপর সংশোধনীর আলোচনায় অংশ নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় আমার কী সম্পদ আছে, তা হলফনামায় দিয়ে থাকি। তারপর পাঁচ বছর পরে নির্বাচনে আবার হলফনামা দিই। সেখানে সম্পত্তি কত বাড়ল, একশ গুণ না পাঁচশ গুণ, তা পত্রিকায় নিউজ হয়। আমাদের আমলনামা চলে আসে।
হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কাস্টমসে যারা চাকরি করেন, তাদের প্রত্যেকের ঢাকা শহরে দুই-তিনটা বাড়ি আছে। বন বিভাগে যারা চাকরি করেন, তাদের দুই-তিনটা করে সোনার দোকান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি পদক্ষেপ নেন, তাহলে দুর্নীতি রোধ করতে পারব। না হলে যে হারে লাগামহীনভাবে বড় বড় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি করছেন, কী করব? আমরা অসহায়। অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন তারাও অসহায়। কারণ এখানে ৯০ শতাংশ লোকই ওইদিকে (দুর্নীতি), ১০-১৫ শতাংশ লোক ভালো থেকে কী করবে?
তিনি বলেন, সরকার অনেক প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু শুধু দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে সোনার অক্ষরে যেভাবে ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নামও সেভাবে লেখা থাকবে। পদক্ষেপ নিলে দুর্নীতি রোধ সম্ভব হবে। এমপি সাহেবদের যেভাবে আমলনামা আছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আমলনামা যদি সেভাবে তৈরিও করা হয়, তাহলে দুর্নীতি রোধ করা যাবে।
নির্বাচনি এলাকায় সংসদ-সদস্যদের কোনো কার্যালয় নেই উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমার বাড়ি যে উপজেলায় সেখানে বাড়িকে অফিস হিসাবে ব্যবহার করি। কিন্তু আরেক উপজেলায় বসার জায়গাও নেই। ইউএনও সাহেবের পাশে টেবিল নিয়ে বসতে হয়। এজন্য প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় সংসদ-সদস্যদের জন্য অফিস করে দেওয়ার অনুরোধ করে বলেন, নির্বাচনি এলাকায় অনেক সালিশ-বিচার করতে হয়। অনেক সমস্যার সমাধান দিতে হয়। এলজিইডিসহ বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বসতে হয়, সেজন্য অফিস থাকলে ভালো হয়।
অর্থবিলের জনমত যাচাইয়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি হামিদুল হক খন্দকার বলেন, কালোটাকা সাদা করা সরকারের দ্বৈতনীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্সের কথা বলে, অন্যদিকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে, এটা কি সম্ভব? যারা বৈধ আয় করবে, তাদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। যারা কালোটাকা সাদা করবে, তাদের ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে। এটা কার স্বার্থে? এটা কোনো নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী কালোটাকা সাদা করেছেন, যা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এটা প্রত্যাশিত না। এই সুযোগে বেনজীর-মতিউরদের মতো দুর্নীতিবাজ আছে। তারা সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে পার পেয়ে যায়। এটা জাতির জন্য কলঙ্ক। কালোটাকা সাদা করতে ৩০ শতাংশ কর ও পুরো টাকা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন তিনি।