এমপি আনার হত্যা
শাহীন ছাড়া তদন্তে গতি আসছে না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম
বাঁয়ে আক্তারুজ্জামান শাহীন, ডানে আনোয়ারুল আজিম আনা। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানিয়েছে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন ছাড়া তদন্তে গতি আসছে না।
ডিবি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক শাহীন হত্যা মিশন বাস্তবায়নের তিনটি ধাপের (কৌশলে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম) সঙ্গেই সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে তার পেছনে কোন কোন নেতা আছে, এমপির সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণ কী এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না তদন্তসংশ্লিষ্টরা। আনার হত্যায় এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর জানে শাহীন। এসব জানতে হলে তাকে লাগবেই।
যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়া শাহীনকে ছাড়া তদন্তে খুব বেশি গতি আসবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, কাটআউট পদ্ধতিতে সংগঠিত এ হত্যাকাণ্ডের মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে ছিলেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্ল্যা ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। আর পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন আনারের ব্যবসায়িক পার্টনার শাহীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় শাহীনকে ডিবি পাচ্ছে না তা প্রায় নিশ্চিত। ফলে আনার হত্যার পেছনের কলকাঠি যারা নেড়েছেন তাদের বিষয়ে খুব একটা অগ্রসর হতে পারছে না ডিবি।
এমনকি আনার হত্যার বেনিফিশিয়ারি ও অর্থদাতা হিসাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেফতার করলেও মাস্টারমাইন্ড শাহীনের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ এখনো ডিবির হাতে আসেনি।
ডিবির ভাষ্য অনুযায়ী, শাহীন কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনার হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন করে ১০ মে ঢাকায় চলে আসেন। ১৩ মে ওই ফ্ল্যাটে খুন হন আনার। বিষয়টি প্রকাশ পেলে ভারত ও নেপাল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও রয়েছে তার। ফলে তাকে বাংলাদেশে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না।
শাহীন বিষয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ জানান, মাস্টারমাইন্ড শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে সেহেতু ভারতীয় পুলিশকে বলেছি যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে আমরা টিম নিয়ে গিয়ে কথা বলেছি। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার মাধ্যমে আমরা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছি। শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য দুই দেশই কাজ করছে।
এদিকে আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ গ্রেফতার মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী ডিবির কাছে ছয় দিনের রিমান্ডে আছে। বুধবার সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে খাগড়াছড়ির ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ডের মাঝখানে পাতাল কালী মন্দির থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক টিম।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল ও মোস্তাফিজ হত্যা মিশনের বর্ণনা দিচ্ছে যা এর আগে গ্রেফতার শিমুল ও তানভীরের বক্তব্যের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। আনারকে হত্যার পর তার মাংস টুকরো টুকরো করার দায়িত্ব ছিল ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদের; রিমান্ডে এ বিষয়ও স্বীকার করেছে তারা। শিমুল ভূঁইয়ার কথায় তারা হত্যায় অংশ নেয় বলেও স্বীকার করেছে। তবে গ্রেফতারের সময় মন্দির থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে আঘাত পান তারা। কিছুটা অসুস্থতার কারণে জোরালোভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন শনিবারও ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আনার অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান।
শনিবার দুপুরে ডিবি ওয়ারী বিভাগের সামনে কথা হয় এ কর্মকর্তার সঙ্গে।
তিনি যুগান্তরকে জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে নতুন করে বলার কিছু নেই।
তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘আক্তারুজ্জামান শাহীনকে ছাড়া তদন্ত আর অগ্রসর হচ্ছে না।’
গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বাবু জবানবন্দিতে জানিয়েছে তার মোবাইল পুকুরে ফেলেছে এজন্য আমরা উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। ফোন না পেলেও তদন্তের কোনো সমস্যা হবে না।’
উল্লেখ্য, এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে নয়জনকে গ্রেফতার করেছে।