Logo
Logo
×

জাতীয়

মেডিকেলছাত্রের নেতৃত্বে ফেসবুকে যৌন ব্যবসা, সাত বছরে আয় ১০০ কোটি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম

মেডিকেলছাত্রের নেতৃত্বে ফেসবুকে যৌন ব্যবসা, সাত বছরে আয় ১০০ কোটি

ফেসবুকসহ সামাজিকমাধ্যমে চাকরি দেওয়া, ট্যালেন্ট হান্ট বা মডেল বানানোর কথা বলে তরুণীদের দিয়ে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করানোর অভিযোগে মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। 

আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে কৌশলে তোলা হয় নগ্নছবি। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। ফাঁদেপড়া মেয়েদের ভিডিওকলে নগ্ন হওয়া এবং যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হয়। সেসব ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে যৌন ব্যবসা চালানো হয়। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে যেমন টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, তেমনি তাদের ভিডিও টেলিগ্রাম গ্রুপে শেয়ার করা হয়। সেখানে থাকা লাখ লাখ দেশি-বিদেশি সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়। এভাবে চক্রটি গত সাত বছরে দেশে ও দেশের বাইরে এসব ভিডিও বিক্রি করে শত কোটি টাকা আয় করেছে বলেও দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থাটি।

চাকরির নামে প্রতারণা

এসব অসামাজিক কাজের নেতৃত্বে রয়েছেন দুই বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান (২৫) ও তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬)।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর চক্রটিকে শনাক্ত করে এর প্রধানসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার।

গ্রেফতার হওয়া অন্য সহযোগীরা হলেন- মো. জাহিদ হাসান কাঁকন, তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত, সৈয়দ হাসিবুর রহমান, শাদাত আল মুইজ, সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি ও নায়না ইসলাম। মঙ্গলবার যশোর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করায় ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, ১টি ল্যাপটপ এবং আয়ের টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এদের মধ্যে মেহেদী হাসান নামে ২৫ বছর বয়সি তরুণ এই চক্রের হোতা। তিনি চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। গ্রেফতার হয়েছেন তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজনও। তারা দুজনে মিলেই এ চক্রটি গড়ে তুলেছেন।

সিআইডি প্রধান বলেন, ফেইসবুক ও টেলিগ্রামে ‘লোভনীয় চাকরি’, মডেল বানানো এবং মেধা-অন্বেষণের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করত তারা। কখনো তারা ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ নামে প্রতিযোগিতার আয়োজনও করত। এতে যারা সাড়া দিতেন তাদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খোলা হতো। তারপর তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশিদের কাছে পাঠানোর কথা বলে মেয়েদের অন্তর্বাস পরা ছবি হাতিয়ে নিত। পরে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে জোরপূর্বক তাদের দিয়ে ‘দেহ ব্যবসা’ করানো হতো। এভাবে চক্রটির হাতে ‘আধুনিক’ যৌন দাসিতে পরিণত হয়ে পড়ে শত শত তরুণী।

দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে চক্রের মূল হোতা ও তার প্রধান সহযোগীদের শনাক্ত করার কথা জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, দেশ-বিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। নানা নামে তাদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা কয়েক লাখ। সাবস্ক্রাইবাররা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকত। চক্রটি ভিডিও কলের সব কিছু গোপনে ধারণ করে রাখত।

তদন্তে ‘অবিশ্বাস্য’ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি ভয়ানক চতুর অল্প বয়সি এই মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং তার খালাতো ভাইয়ের জিম্মায় কয়েক হাজার নারী রয়েছে। টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম সেলিব্রেটিও রয়েছে তার মধ্যে। 

সিআইডি প্রধান বলেন, অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লাখ ন্যুড ছবি ও ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিওর সন্ধান পেয়েছি।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইন, দণ্ডবিধি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি পর্নো ভিডিও তৈরি করে টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে গত সাত বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে তারা। এ টাকায় চক্রটি যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে, নির্মাণ করেছে ‘আলিশান’ বাড়ি। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করত এমএফএস বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস। ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

চক্রটি এসব কাজ করতে গিয়ে শত শত মোবাইলের সিম ব্যবহার করলেও কোনোটিই তাদের প্রকৃত ন্যাশনাল আইডি দিয়ে নিবন্ধন করা নয়। নিম্নআয়ের মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে তাদের এনআইডি দিয়ে সিমগুলো খোলা হয় বলে জানান সিআইডি প্রধান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম