পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ অগ্রহণযোগ্য: নোয়াব
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১১:০৪ পিএম
দেশের সাবেক ও বর্তমান উচ্চ এবং নিæপদস্থ পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের বিষয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, যা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের সব গণমাধ্যমের সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
পরে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আকারে প্রকাশিত হয়েছে। নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) মনে করে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নৈতিক সমর্থন জুগিয়েছে। নোয়াব সভাপতি একে আজাদ ও সহসভাপতি এএসএম শহিদুল্লাহ খান স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপির একটি অংশে বলা হয়, ‘জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্যও আমরা সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে নোয়াবের বক্তব্য হলো, পুলিশের নানা অর্জন ও ভালো কাজের মূল্যায়ন প্রতিবেদন আকারে গণমাধ্যম প্রচার করে থাকে। আবার সরকারের দায়িত্বশীল পদে কর্মরত থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন, যা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন তথ্য অনুসন্ধান করে পেশাদারত্বের সঙ্গে তা প্রকাশের কাজটিও করে থাকে গণমাধ্যম। এসব বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনে কোনো ত্র“টি থাকলে তার দায় সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের।
এ নিয়ে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অথবা যথাযথ নিয়ম ও বিধি অনুসরণ করে প্রেস কাউন্সিলের দারস্থ হতে পারে। তা না করে প্রতিবাদের মাধ্যমে পারস্পরিক দোষারোপ, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধের নামে গণমাধ্যমকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার পরিপন্থি বলে মনে করে নোয়াব।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ চিঠি তাদের ভাবমূর্তিকেই আরও ক্ষুণ্ণ করেছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়েছে। নোয়াব প্রত্যাশা করে ভবিষ্যতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে গণমাধ্যমকর্মীদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় পুলিশ বাহিনী সহযোগিতা করবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবি ক্র্যাবের : গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।
পুলিশের এমন প্রতিক্রিয়াকে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি ও হস্তক্ষেপের শামিল বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। এ ধরনের বিবৃতির মধ্য দিয়ে কতিপয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দুর্নীতি উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মনে করে বিবৃতিটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সাংবাদিকরা সব সময় দায়িত্বশীল এবং তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন। তবে প্রকাশিত সংবাদ অসত্য মনে হলে দেশের আইন অনুযায়ী প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সম্প্র্রতি বিবৃতি দিয়ে যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি ও হস্তক্ষেপের শামিল। ওই বিবৃতির মধ্য দিয়ে কতিপয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দুর্নীতিতে উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ক্র্যাব সব সময় সংগঠনের সদস্যদের পেশাদারত্বকে সম্মান করে, সেই সঙ্গে সদস্যদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে। ক্র্যাব সদস্যদের প্রতিটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বরাবরই সত্য উঠে আসে, যা সব মহলে প্রশংসিত।
দেশের স্বার্থে সাংবাদিক ও পুলিশ অপরাধ এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করে আসছে। আগামী দিনেও একই সঙ্গে কাজ করবে সাংবাদিক ও পুলিশ।