বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ৩২ হাজার কোটি টাকা: সংসদে নসরুল হামিদ
সংসদ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ১০:১০ পিএম
ফাইল ছবি
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও একই অর্থবছরে এলএনজি খাতে সরকার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
রাজনৈতিক কারণে কারাগারে কেউ আটক নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সরকারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা উলেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভর্তুকির অর্থের মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭০০ কোটি নগদ ও ২০ হাজার ১৩৩ কোটি বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, এলএনজি খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ হাজার কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩১৫ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হয়। ওই সময় সরকারকে উলেখযোগ্য অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। তবে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ায় ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিপিসি ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।
সরকার বর্তমানে ডাইনামিক প্রাইসিং ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
এলপিজি প্ল্যান্ট : মোরশেদ আলমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনুমোদনপ্রাপ্ত এলপিজি প্ল্যান্টের সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫২টি, চ‚ড়ান্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ২৪টি ও বিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২টি।
কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভ‚তুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে : মামুনুর রশীদ কিরণের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। বিদ্যুৎ বিল যাতে যথাযথ হয়, সে বিষয়ে বহুবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভ‚তুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। ভ‚তুড়ে/অস্বাভাবিক বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রি-পেইড/স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন : সোহরাব উদ্দিনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়েও স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তবে কোভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া অত্যধিক গরম ও কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহে চাহিদা বাড়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন : আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১৩১২ দশমিক ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে চলমান ও প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলোয় উৎপাদিতব্য বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২২ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
ক‚প খনন : মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের ক‚প খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১টির খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
গ্যাস ক্ষেত্র : একই সদস্যের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি উৎপাদনরত, ৫টি পরিত্যক্ত এবং ৪টির উৎপাদন কার্যক্রম চলমান।
গ্যাসের চাহিদা : এম. আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক ৩৮০০-৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে ৩০০০-৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশে বন্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৩৯৭টি : নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বর্তমানে দেশে বন্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৯৭টি। এর মধ্যে বিসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন রুগ্ণ/বন্ধ শিল্প ৩৮২টি, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ পাঁচটি, বিএসএফআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন চিনিকল ছয়টি, বিএসইসির চারটিসহ মোট ৩৯৭টি।