২০ কিমি জুড়ে তীব্র যানজট, ঈদযাত্রায় ভোগান্তি
চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৭:০১ পিএম
বেতন ও বোনাসের দাবিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের অন্তত ২০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা।
শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ চলে টানা দেড় ঘণ্টা। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সব বেতন-বোনাস পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি এবং প্রশাসনের আশ্বাসে দুপুর সাড়ে ১২টায় মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।
এদিকে অবরোধে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো যাত্রী ও চালক-শ্রমিকদের। খুব বেশি বেকায়দায় পড়েছেন রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী ও হাটের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া গরুবাহী ট্রাকচালকরা।
মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কাবিলা থেকে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। গরুবাহী ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন জানান, গরু নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছি, চট্টগ্রাম যাব। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে যানজটে আটকে আছি। এমন রোদে গরুগুলোও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বিদেশগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন জানান, দুপুর ২টার মধ্যে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। দ্রুত পৌঁছার জন্য প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে এসেছি; কিন্তু যানজটে আটকে চান্দিনাতেই দেড়টা বেজেছে। কখন পৌঁছতে পারবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহণের যাত্রী শাহানা পারভীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকরা চাকরি করেন গার্মেন্টেসে, যদি তাদের বেতন বোনাস না দেওয়া হয় তাহলে তারা গার্মেন্টসে বিক্ষোভ করবে; কিন্তু তারা মহাসড়কে উঠে হাজারও মানুষকে কেন দুর্ভোগে ফেলেবে? মহাসড়কে চলাচলরত গাড়ি চালকরা কী তাদের বেতন দেবে? এসব ঘটনায় প্রশাসন আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব জানান, আজকের মধ্যেই (শুক্রবার) তাদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করা হবে। আমরা অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিয়েছি। চান্দিনা থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।
চান্দিনা-দাউদকান্দি সার্কেলের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এনায়েত কবির সোয়েব জানান, অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকদের সরিয়ে নিয়ে যান চলাচল শুরু করেছি; কিন্তু দেড় ঘণ্টায় তীব্র যানজট হওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের পুলিশ কাজ করছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর আড়াইটা) যানবাহন থেমে থেমে চলছে।
ডেনিম প্রসেসিং প্লান্টের একাধিক বিক্ষুব্ধ শ্রমিক জানান, আমরা পেটের দায়ে গার্মেন্টসে চাকরি করি। এই গার্মেন্টসে সব সময়ই এক মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। আর বছরে অন্তত ৩-৪ মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। মাসে ৯০ ঘণ্টা ওভারটাইম করলেও ৩০-৩৫ ঘণ্টার বেতন দেয়, বাকি ওভারটাই কেটে নেয় তারা। ঈদের আর মাত্র ২ দিন বাকি, এখনো আমাদের ২ মাসের বেতন বকেয়া- এমনকি বোনাসও দেওয়া হয় নাই। আমরা ঈদ করব কিভাবে?