নৈতিকতাহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪, ১০:১৯ পিএম
দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতই এখন সংকটে। সূচকগুলো দুর্বল অবস্থানে। রেমিট্যান্সে (প্রবাসী আয়) ইতিবাচক সাড়া নেই। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বিশৃঙ্খল ব্যাংকিং খাত এবং মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি একটা ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। সামনে ঋণের বড় ফাঁদ। এখন ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের সময় চলে এসেছে। এর আগেও এসব সংকট ছিল। তবে সে অর্থনীতির এসব হজমের সক্ষমতা ছিল। এখন সে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সবকিছু মিলিয়ে ক্রমেই নৈতিকতাহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এ অবস্থা মোকাবিলায় ব্যাংক, রাজস্ব খাত এবং প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কারের বিকল্প নেই। এছাড়া কেন এই অবস্থা তৈরি হলো, সে ব্যাপারে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার।
সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব এবং জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত বাজেট আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখতে বিজ্ঞাপনের মূল্য বাড়ানো এবং বকেয়া টাকা পরিশোধে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫।’
তাদের মতে, এবারের বাজেট প্রণয়নে লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
এসময় অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশে অর্থনীতির প্রতিটি খাতই এখন সংকটে। রেমিট্যান্স এখন ইতিবাচক ধারায় নেই। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। এর আগেও এসব সংকট ছিল, কিন্তু তখন প্রকাশ পায়নি। এখন রিজার্ভ সংকট, সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দা- এগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। আগে নেতিবাচক দিকগুলো সামাল দেওয়া গেলেও এখন সামাল দেওয়া কঠিন।
অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকারী খাতই এখন অরক্ষিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে। আবার টাকা জমাও হয়, রাতারাতি সেই টাকা উধাও হয়ে যায়। সামগ্রিক অর্থনীতি একটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যেই জাতীয় বাজেট উত্থাপন হয়েছে সংসদে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর খেলাপির পাল্লা ভারী হচ্ছে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। বাজেটের অবস্থা দেখলে বোঝা যায়, রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে নিম্নতম হারের দিকে আমরা অবস্থান করছি। এর সঙ্গে রয়েছে আইএমএফের চাপ আর নানা ভর্তুকির বোঝা। রাজস্ব আহরণের হার নিম্নমানের হলেও এ বিষয়টি সব সময়ই অবহেলায় ছিল।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর আরও চাপ বাড়বে। যা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে দেওয়া আর ঋণ নেওয়া- এগুলো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এই খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সংকট আরও ঘনীভূত করছে। এতে ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে। ব্যাংক থেকে ছোট উদ্যোক্তারা তো ঋণই পাবে না।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, নোয়াব সভাপতি একে আজাদ এমপি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।