Logo
Logo
×

জাতীয়

নিমতলী ট্র্যাজেডি

১৪ বছরেও শনাক্ত হয়নি দায়ী ব্যক্তিরা

Icon

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ০২:১১ পিএম

১৪ বছরেও শনাক্ত হয়নি দায়ী ব্যক্তিরা

ফাইল ছবি

নিমতলী ট্র্যাজেডির ১৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১০ সালের ৩ জুন রাত ৯টায় ভয়াবহ আগুনে ঝরে যায় ১২৪টি প্রাণ। রাসায়নিকের গুদামে রক্ষিত দাহ্য পদার্থের কারণেই পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ হতাহতের ঘটনায় থানায় শুধু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। কোনো মামলা হয়নি। এতে আগুনের ঘটনার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করা যায়নি।

এ ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে নিতে গঠিত হয় দুটি কমিটি। সেই কমিটি কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জায়গা ঠিক করার সুপারিশসহ উচ্চমাত্রার বিপজ্জনক ৫ শতাধিক রাসায়নিকের গুদামের তালিকা করে প্রতিবেদন দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু নিমতলী থেকে সরলেও এখনো সরেনি পুরান ঢাকার অন্য স্থানের রাসায়নিকের গুদাম।

নিমতলী ট্র্যাজেডির সেই বাড়ির সামনে বসে ফল ও কবুতর বিক্রি করেন মামুন। দোকানে টানিয়ে রেখেছেন প্রিয় সন্তান সাত বছরের বৈশাখের ছবি। মামুন বলেন, ঘটনার দিন বাড়ির সামনের দোকানে ছেলে বৈশাখকে নিয়ে বসেছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখেন সামনের ভবনে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে বিস্ফোরণ। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারদিক। গুরুতর আহত হন মামুন। আর তার পাশেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বৈশাখ। মামুন বলেন, তাকে এক মাস থাকতে হয়েছে হাসপাতালে। ছেলের জানাজায় অংশ নেওয়ারও সুযোগ হয়নি তার। 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই ভয়াবহ আগুনের ঘটনার জন্য কেউ না কেউ তো দায়ী আছে। তাদেরকে ১৪ বছরেও শনাক্ত করা হয়নি। নিমতলীর ৪৩ নম্বর ৫ তলা বাড়িতে সেদিন রাত ৯টায় আগুন লাগে। বাড়িটির নিচতলায় দুই বোন রুনা আর রত্না ও পাশের বাড়িতে আসমা নামে আরেক তরুণীর বিয়ের আয়োজন চলছিল। রান্নার জায়গার পাশেই ছিল রাসায়নিকের গুদাম। প্রচণ্ড তাপে গুদামে থাকা রাসায়নিকের প্লাস্টিকের ড্রাম গলে যায়। মুহূর্তেই বিস্ফোরণে আগুন লেগে ঘটনাস্থলেই এক পরিবারের ১১ জনের মৃত্যু হয়। আর সামনের ৫৫ নম্বর বাড়ির ছয়জন ও বিয়ে বাড়ির পাশের বাড়ির আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়। মুহূর্তে লাগা আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। একে একে মারা যান ১২৪ জন। এ ঘটনায় পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা। ঘটনার পর রুনা, রত্না ও আসমার বিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের স্বামীদেরও চাকরির ব্যবস্থা করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৭২টি পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেওয়া হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ-সদস্য হাজি সেলিমের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল এক মাসের বাজার ও অন্য সহায়তা। এরপর আজও আর কেউ এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজ নেননি। সেই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অধিকাংশই এই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, এই আগুনের ঘটনার পর নিমতলী থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন এই এলাকায় আর কোনো কেমিক্যাল গোডাউন নেই। তিনি বলেন, ৭২টি পরিবারের ১২৪ জন মারা যান এই অগ্নিকাণ্ডে। নিমতলীতে স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে।

প্রতি বছরের ৩ জুন পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শোক পালন করা হয়। জানা গেছে, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে গোডাউন ভাড়া নিয়ে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড এলাকায় বসতবাড়িসহ অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গোডাউন করে রাখা হয় কেমিক্যাল। তবে গোডাউনের কথা বরাবরই অস্বীকার করেন ব্যবসায়ীরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দোকান কর্মচারী বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বাড়িতে গোপনে কেমিক্যাল মজুত করে রাখেন। আর ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানেই রাখেন মালামাল। তার দাবি, পুরান ঢাকার প্রায় বাড়িতেই রয়েছে কেমিক্যালের গোডাউন। তবে এখন কিছু গোডাউন কেরানীগঞ্জে নেওয়া হয়েছে। এতে বেড়েছে খরচ। একজন শ্রমিক বলেন, কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের মালামাল আসে রাতে। রাত ১২টার পর থেকে গভীর রাত অবদি গোডাউনগুলোতে মালামাল ঢুকানো হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম