Logo
Logo
×

জাতীয়

দেশ ছাড়ার আগে যা যা বিক্রি করলেন বেনজীর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১১:৩২ পিএম

দেশ ছাড়ার আগে যা যা বিক্রি করলেন বেনজীর

পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। ফাইল ছবি

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করার আগেই অ্যাকাউন্টের অধিকাংশ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুবাইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার পর তা বিক্রি করে দিয়েছেন বেনজীর-এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

সাবেক এই আইজিপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরপরই আড়ালে চলে যান।  তবে কোথায় ছিলেন সেটি নিদিষ্ট করে জানা যাচ্ছিল না। তবে বেনজীরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। বেনজীর এখন দেশে নেই। 

‘টাকার কথা কাউকে বললে আবারও তোকে আসামি করব’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের রেকর্ডে উল্লেখ আছে, গত ৪ মে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে ছিলেন।

ক্ষমতায় থাকতে যারা তার অতি আপন ছিলেন, তারাও এখন সরে গেছেন। এমনকি পুলিশ সদর দপ্তরের অন্তত ৫টি কেনাকাটার খাত থেকে বিপুল অর্থ লোপাটে যেসব কর্মকর্তা সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন তারাও বেনজীরকে ‘খারাপ’ আখ্যা দিচ্ছেন। বেনজীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত ওই কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই এখন খারাপ অবস্থায় আছেন। 

গুলশানে একদিনে ‘পানির দামে’ ৪ ফ্ল্যাট কেনেন বেনজীর!

এদিকে বেনজীর পরিবারের সম্পদের খোঁজে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান টিম। ধারাবাহিকভাবে তারা বেনজীর পরিবারের নামে-বেনামে নতুন নতুন সম্পদের তথ্য পাচ্ছে। এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে পরিচিত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নামেও সম্পত্তি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। 

তবে নতুন করে সাতক্ষীরায় বেনজীরের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও আরেক পুলিশ কর্মকর্তার নামে কয়েকশ বিঘা আয়তনের মাছের ঘের থাকার তথ্য এসেছে দুদকের হাতে। এছাড়া ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুবাইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার পর তা বিক্রি করে দিয়েছেন বেনজীর-এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

বেনজীরের মোবাইল ফোন এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ‘আত্মগোপন’ অবস্থায় থাকলেও তার শুভাকাক্সক্ষী হিসাবে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬ জুন দুদকের তলবের জবাব দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ কাজে বেশ কয়েকজন আইনজীবীর একটি টিম কাজ করছে। 

নির্ধারিত দিনে বেনজীরের পরিবর্তে তার আইনজীবীরা দুদকে হাজির হয়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলেছেন, ৬ জুন বেনজীরকে সশরীরে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। তিনি নিজে না গেলে জনমনে ভুল মেসেজ যাবে। তাই দুদকের মুখোমুখি হয়ে আইনি মোকাবিলা করার কথাও জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে উল্লিখিত তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বেনজীর আহমেদের শ্বশুরবাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। সেখানে তিনি কয়েকশ বিঘা আয়তনের মাছের ঘের প্রতিষ্ঠা করেছেন। শাশুড়ির নামে সেখানে বিপুল পরিমাণ জায়গা কেনা হয়েছে।

অনেক জায়গা দখলেরও অভিযোগ আছে। ঘেরের যৌথ মালিকানায় আছেন আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা। বিসিএস ২৪ ব্যাচের ওই কর্মকর্তা এখন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশে কর্মরত। তার আদি নিবাস গোপালগঞ্জে হলেও বাবার চাকরির সুবাদে খুলনায়ও বাড়ি আছে। বেনজীরের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় খুলনা, গোপালগঞ্জ ও গাজীপুরে তার বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেছে দুদক।

আরও জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের প্লাম জুমেরা ও মেরিনা এলাকায় বেনজীরের নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে জুমেরা এলাকার ৪০ তলা কনকর্ড টাওয়ারে অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট তিনি অতিসম্প্রতি ৯০ লাখ দিরহামে (২৮ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বিক্রি করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দুবাইয়ের ‘মস্কো’ নামের একটি বহুতল হোটেলে বেনজীরের যৌথ বিনিয়োগের তথ্যও আছে। আর ঢাকার ভাটারা থানাধীন একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় বেনজীরের একটি সাততলা ভবন ছিল। সেটাও সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন। অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর এসব সম্পদ বিক্রি করা হয়েছে বলে দুদক জানতে পেরেছে। 

জানা গেছে, ২৩ ও ২৬ মে দুদকের দুই দফায় করা আবেদন আমলে নিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। ২৩ মে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। 

এছাড়া আদালতের নির্দেশে গত সোমবার পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) ফ্রিজ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় হিসাবগুলোয় শেয়ার ও অর্থ লেনদেন করা যাবে না। আদালতের অন্যান্য আদেশও কার্যকর করা শুরু হয়েছে।

দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আগামী ৬ জুন বেনজীর ও ৯ জুন তার পরিবারের সদস্যরা দুদকে সশরীরে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন, নাও পারেন। আবার তারা আইনজীবীর মাধ্যমেও তাদের বক্তব্য ও তথ্য-উপাত্ত পাঠাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তারা যেটাই করেন, ৬ জুনের পর দুদক আইনের ২৬(১) ধারা অনুযায়ী বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সচিব, শিল্পপতিসহ ‘হাইপ্রোফাইল’ অনেককেই দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মামলা দায়েরের পর। কারণ মামলার তদন্তকালে আসামিদের বক্তব্য নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন করতে আসামিদের বক্তব্য নেওয়া বাধ্যতামূলক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম