কৃষক দাম পায় না, দৌরাত্ম্য কমাতে হবে মধ্যস্বত্বভোগীদের

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ১০:২৯ পিএম

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না, অপরদিকে ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য কিনছেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা করছেন, তাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা চাষাবাদের জন্য টাকা পান না। ফলে বাধ্য হয়ে উৎপাদিত ফসল কম দামে বিক্রি করে দেন। এক-তৃতীয়াংশ ফসল বিক্রি করে সেচ, সার ও শ্রমিকের খরচ দিতে হয়। কৃষকদের টাকা দিলে সেই টাকা ফেরত পাওয়া সহজ। যদিও এদেশে কোটিপতিরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন না।
তিনি আরও বলেন, আমদানি-রপ্তানিকারকদের সুবিধার্থে খুব শিগগিরই ঢাকা চেম্বারে একটি পূর্ণাঙ্গ হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে, যেখান থেকে ‘আইআরসি’ এবং ‘ইআরসি’ সার্টিফিকেট প্রাপ্তির সব সুবিধা প্রদান করা হবে। তিনি জানান, এ বছরের শেষ নাগাদ ‘যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি)’-এর সেবার সব কার্যক্রম পেপারলেস করা হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি হ্রাস পাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের কোনো বিকল্প নেই এবং পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ভ্যালু চেইনের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের কোন জায়গায় তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, এ ধরনের তথ্য প্রাপ্তির একটি প্ল্যাটফর্ম প্রণয়নের জন্য তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কৃষি খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদনশীলতা ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা যায়। একই সঙ্গে এ খাতে ব্যয় ২০ শতাংশ হ্রাসের পাশাপাশি কৃষকের আয় ৩০-৪০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও কৃষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষি গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, প্রয়োজনীয় সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন ডিসিসিআই সভাপতি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো. সামসুল আরেফিন বলেন, দেশের কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করে এ খাতের তথ্য-প্রযুক্তি তৈরি করা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ সমাজ সাম্প্রতিক সময়ে কৃষির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেটা অনেক উৎসাহব্যঞ্জক একটি বিষয়।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, প্রচলিত কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারের কারণেও উৎপাদন হ্রাস পায়। এ অবস্থায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার প্রাকটিসের ওপর আরও বেশি করে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
সেমিনারে আইফার্মারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ ‘এগ্রো ভ্যালু চেইনে ফ্রন্টিয়ার টেক অটোমেশনের সম্ভাবনা’ এবং সুইসকন্টাক-এর সিনিয়র ম্যানেজার (প্রোগ্রাম) মোহাম্মদ সাকিব খালেদ ‘স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার : ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ইন ভ্যালুচেইন ডেভেলমেন্ট’ বিষয়ক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ফাহাদ ইফাজ বলেন, কৃষি খাতে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বাজারের অভিগম্যতা বাড়ানো, উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম। মোহাম্মদ সাকিব খালেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি দেশের কৃষি খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, যা মোকাবিলায় আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সেমিনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশে ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ঊর্ধ্বতন কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আবু বাকের সিদ্দিকী, অ্যাকুয়ালিঙ্ক বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও সৈয়দ রিজবান হোসেন, উইন ইনকরপোরেটের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা ড. কাশফিয়া আহমেদ, ড. ক্যাশআই ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেদিনা আলী এবং ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের পরিচালক ও সিইও ড. মোহাম্মদ রিসালাত সিদ্দিকী অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।