বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিও হিসাব ফ্রিজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে থাকা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ ও ২৬ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন।
ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের নামে সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এক আদেশ কার্যকর থাকাবস্থায় অর্থ অবরুদ্ধ হিসাবসমূহে জমা করা যাবে না বা কোনো অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না।
এর আগে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদের মধ্যে ঢাকায় চারটি ফ্ল্যাট, বেনজীরের চারটি শতভাগ মালিকানা কোম্পানি, ১৫টি আংশিক মালিকানা কোম্পানি ও চারটি বিও অ্যাকাউন্ট জব্দের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।
বেনজীরের চেয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ের সম্পত্তি বেশি
দুদকের শীর্ষ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করার বিষয়ে আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২৩ মে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে বেনজীর আহমেদের ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আর্থিক লেনদেনকারী মোট ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এর ফলে তিনি ব্যাংক থেকে আর কোনো লেনদেন করতে পারবেন না। সেই সঙ্গে তার সব ক্রোক করা সম্পদ জব্দ হিসাবে থাকবে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে জানা গেছে। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা তাদের বিদেশযাত্রা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছেন।
২৩ মে দুদকের উপপরিচালক হাফিজ উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদের সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) এবং গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারে ৮৩টি দলিলের সব সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। এরপর ঢাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ আরও সম্পদের খোঁজ পাওয়ায় সেগুলোও ক্রোকের আবেদন করে দুদক।
জানা যায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানেই বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন সাভানা ইকো রিসোর্ট, দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ছয়টি কোম্পানি, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বিপুল জায়গা-জমি, পূর্বাচলে ৪০ কাঠার ওপর নির্মিত নজরকাড়া ডুপ্লেক্স বাড়ি ও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতনভাতা বাবদ আয় করেছেন আনুমানিক ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু তার বর্তমানে যে সম্পদ রয়েছে, বাজারমূল্য অনুযায়ী হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ, সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি ও বিপুল সম্পদের তথ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড়, হইচই পড়ে যায়। তার সম্পদের অনুসন্ধানে দুদককে চিঠি দেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এমপি। এরপর দুদক বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদের অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে।