ফাইল ছবি
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি জালিয়াতির মামলায় চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুদক।
জালিয়াতির মাধ্যমে ১১০ কোটি টাকার সম্পদের দলিল ১৫ কোটি টাকায় ক্রয় ও দলিল সম্পাদনের অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। বাচ্চু ছাড়াও চার্জশিটের অপর আসামিরা হলেন স্ত্রী শিরিন আক্তার, ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক, ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না ও হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।
সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে কমিশন সভায় ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী শিগ্গিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন বলে জানা গেছে। দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০.২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় ক্রয়ের জন্য অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিপত্র করেন। চুক্তির জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা হলেও চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় অর্থ পরিশোধ দেখানো হয় ১০ কোটি টাকা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুটি দলিলই রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা উলেখ করা হয়। যেখানে গ্রহীতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও শিরিন আক্তার। অন্যদিকে দ্বিতীয় দলিলে ওই একই বছরে ১২.২৫ কাঠার দাম ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা হলেন শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। রেজিস্ট্রেশনে মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ অর্থ গোপন করেছেন। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, জমি বিক্রি ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে সহযোগিতা করেন। আমিন আহমেদ ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। অপরদিকে তাদের আয়কর নথিতে জমির জন্য মূল্য প্রদর্শন করেছেন ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর আয়-ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়।
আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব¡ পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে ভুয়া ঋণ মঞ্জুর করেন। এছাড়া মোটা অঙ্কের অর্থ আÍসাৎ, অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেন। আসামি আমিন আহমেদ সুকৌশলে বাচ্চুর অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানে সরাসরি সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। দুদকের তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালে ৫৯টি মামলা দায়েরের ৮ বছর পর গত জুনে এসব মামলায় ব্যাংকটির আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক।