নিউরোসায়েন্সের লিফটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আটকা, রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলায় ছিল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনকে বহনের সময় লিফট দুর্ঘটনায় অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এতে লিফট রক্ষাণাবেক্ষণসহ লিফট অপারেটরের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকার প্রমাণ মিলেছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের একটি কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটির পরিদর্শনকালে লিফটটি চলাচলে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে লিফটসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য ও অন্যান্য তথ্যাবলি পর্যালোচনা করে বেশকিছু ত্র“টির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত ৩১ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে এক আলোচনাসভায় যোগ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওইদিন তিনি ৯ থেকে ১০ জন চিকিৎসক-কর্মকর্তাসহ দশতলা থেকে নিচতলায় নামতে লিফটে উঠেন। লিফটটি দ্বিতীয় তলার কাছাকাছি পৌঁছার সময় এবং থামার পর শব্দ হয়।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা না খোলায় একধিক লিফট অপারেটর ৭ থেকে ৮ মিনিট পর দরজা খোলার ব্যবস্থা করেন। দরজা খোলার পর দেখা যায় লিফটটি নির্ধারিত নিচতলার মেঝের সমতলে না থেমে মেঝে থেকে অনেকটা নিচে থেমেছে। এ পরিস্থিতিতে লিফট অপারেটরের বসার নির্ধারিত টুলের সহায়তায় মন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের বের করে আনা হয়। এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এমন পরিস্থিতিতে গণপূর্ত বিভাগের তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সরেজমিন ৯টি ত্র“টির তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত ১০০০ কেজি ধারণক্ষমতার লিফটটি ‘মান বংলাদেশ লিমিটেড’ কর্তৃক সিগমা (ম্যানুফেকচার বাই ওটিআইসস এলিভেটর, কোরিয়া) ব্র্যান্ডের। লিফটটি নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়। লিফটটি নিরবচ্ছিন্ন পরিচালনায় চলতি অর্থবছরে মাসিক সার্ভিসিং এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একই প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৭, ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ই/এম) এবং উপসহকারীর (ই/এম) লিফট রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্দেশ থাকলেও প্রত্যক্ষ কাজ তদারকিতে ঘাটতি পাওয়া গেছে।
লিফট পরিচালনার জন্য স্থিতিশীল ভোল্টেজ সংবলিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে স্থাপিত অটোমেটিক ভোল্টেজ রেগুলেটর (এভিআর) ডিভাইসটি অকেজো অবস্থায় রয়েছে। লিফট চলাচলের সময় কোনো কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে বা অন্য কোনো কারণে লিফট দুই ফ্লোরের মধ্যবর্তী স্থানে বন্ধ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকটস্থ ফ্লোর লেভেলে লিফট নিয়ে যাওয়ার জন্য অটোমেটিক রেসকিউ ডিভাইস (এআরডি) স্থাপিত নেই।
লিফটটিতে অতিরিক্ত লোক উঠলেও ওই সময় ওভার লোড সেন্সর কাজ করেনি। বিদ্যুৎ সরবরাহ সিস্টেমে ভোল্টেজ ফ্লাকচুয়েট বা অন্য কোনো ত্র“টিজনিত কারণে নির্দিষ্ট লেভেলে থামার জন্য সুইচ বা কন্ট্রোলার যথাযথভাবে কাজ না করায় নির্ধারিত লেভেলে থামতে পারেনি। লিফটের ডিভাইস ও ফাংশনগুলো মাসিক ভিত্তিতে যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হয়নি।
র্ভিসিং ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের ওপর একক নির্ভরতা এবং কাজের সময় গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলদের উপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
লিফট অপারেটরের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকা সত্তে¡ও এমন অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে। এমনকি নিয়োগের পরও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।