শহিদ মিনারে রনোকে ‘গার্ড অব অনার’ বনানীতে দাফন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:০৫ পিএম
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড হায়দার আকবর খান রনোর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার রাজধানীর বনানী কবরস্থানে বাবা, মা ও ছোট ভাইয়ের কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হায়দার আকবর খান রনোর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টার দিকে তার লাশ রাজধানীর পল্টনে দলের সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনে নেওয়া হয়। সেখানে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শোক র্যালি নিয়ে রনোর লাশ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সেখানে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকশ দল তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘গার্ড অব অনার’ দেয়। এরপর সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির উদ্যোগে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জেএসডি, জাসদ, বাসদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, ঐক্য ন্যাপ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী নেতারা প্রয়াত রাজনীতিককে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।
তাকে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল, আফজাল হোসেন, মৃণাল কান্তি দাস কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জহির উদ্দিন স্বপন, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আফসোস করে বলেন, হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে জাতির বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কমরেড হায়দার আকবর খান রনোর নাম ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে, জনগণের মুক্তিসংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হায়দার আকবর খান রনো একটি অনন্য নাম। এ রাজনীতিকের প্রস্থান দেশের রাজনীতিতে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, হায়দার আকবর খান রনো কেবল একজন রাজনীতিক ছিলেন না, তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন ছিলেন। এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন।
শুক্রবার রাত ২টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মার্কসবাদী তাত্ত্বিক হায়দার আকবর খান রনো। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা রনো একাধিক বই লিখেছেন। ২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে তিনি সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তাকে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি দলের উপদেষ্টা হন। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার দেশব্যাপী শোক পালন করেছে সিপিবি।