রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন
এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় মানব সম্পদের ক্ষতি ২,১১৯ কোটি টাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম
বিদায়ি এপ্রিল মাসে দেশে ৬৭২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬৭৯ জন নিহত এবং ৯৩৪ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৩ জন ও শিশু ১০৮ জন। ওই মাসে ৩১৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৯ জন; যা মোট নিহতের ৩৮.১৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৭ শতাংশ।
নিহতের সংখ্যার দিক থেকে দুর্ঘটনায় ১১৩ জন পথচারী মারা গেছেন; যা মোট নিহতের ১৬.৬৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৬ জন। অর্থাৎ ১৪.১৩ শতাংশ। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সংগঠনটি দাবি করেছে, এপ্রিল মাসের সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ১১৯ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ইন্টারন্যাশনাল রোড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম পদ্ধতিতে আর্থিক ক্ষতির এই হিসাব বের করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ বাড়তি যোগ করতে হবে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, তার তথ্য না পাওয়ায় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। বেপরোয়া যানবাহন, সড়কের সমস্যা এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবনমুখী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকার কারণে বাস এবং পণ্যবাহী যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তারা সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। এছাড়া মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের পেছনে বেপরোয়া যানবাহনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে যানবাহন দাঁড়ানো নিষিদ্ধ করতে হবে।
দুর্ঘটনার ধরন প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিল মাসে ৬৭২টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে ১৭৪টি বা ২৫.৮৯ শতাংশ। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে ২৬২টি (৩৯ শতাংশ), পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটে ১২০টি (১৭.৮৫ শতাংশ) ও যানবাহনের পেছনে আঘাত করা ৯৭টি (১৪.৪৩ শতাংশ)। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৩৫টি (৩৪.৯৭ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৬টি (৩৯.৫৮ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৮৭টি (১২.৯৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৭৯টি (১১.৭৫ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং ৫টি (০.৭৪ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ১ হাজার ১৮৭টি। এর মধ্যে বাস ১২৯টি, ট্রাক ১৫৭টি, কাভার্ডভ্যান ১৮টি, পিকআপ ৪৯টি, মোটরসাইকেল ৩৫৪ ও থ্রি-হুইলার ২৩১টি রয়েছে।
বিদায়ি মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩২টি দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭৬ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় ৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৬৬ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার ১০টি কারণ উলেখ করা হয়। এর মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছেÑত্র“টিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল এবং তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো উল্লেখযোগ্য।