মা, হৃদয়ের গভীর থেকে আসা ছোট্ট একটা ডাক। জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষটি মা। যার শরীর বেয়ে এই পৃথিবীতে আসা, যার আদর-যত্নে বেড়ে ওঠা। যার জীবনের সবটুকুজুড়ে সন্তানকে ভালো রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা।
আজ সেই মায়ের জন্য, সন্তানদের জন্য বিশেষ একটি দিন। আজ মা দিবস। অনেকেই বলে থাকেন, মাকে ভালোবাসতে আবার বিশেষ দিন কী? মা তো মা-ই। তবু বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হবে মা দিবস।
প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বাংলাদেশে মা দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। পরিবার-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই মাকে নিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়। মা মানেই চিরন্তন ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতীক।
পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তো মায়েরা কর্মরত। কখনো তিনি বাড়িতে দিন-রাত খেটে যাচ্ছেন, কখনো বা ঘরে-বাইরে একসঙ্গে সামলে নিচ্ছেন। কখনো আবার সন্তান-সন্তান করে পুরো জীবনটাই সুখ-দুঃখের মধ্যে পার করে দিচ্ছেন। নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ারও সময় থাকে না তার। সন্তানের যত্ন নিতে নিতে নিজেকে যত্ন করতে ভুলে যাওয়ার নামই যেন মা।
এবার বরং সন্তান হিসাবে আপনিই খেয়াল রাখুন, মা নিজের পরিচর্যাটা ঠিকঠাক করছেন কিনা। মা দিবস উদযাপনে বছরের একটা বিশেষ দিন হোক, কিংবা অন্য যে কোনো দিনে। চিত্রনায়ক জায়েদ খান শনিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, দুনিয়াতে মায়ের তুলনা হয় না।
মায়ের শূন্যস্থান কখনো পূরণ থাকে না। অবশ্য মাকে ভালোবাসতে কোনো দিবস লাগে না। তবে এ দিবস নিশ্চয় সম্মানের। সন্তানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মা-বাবার প্রতি সর্বোচ দায়িত্ব পালন করা। যখন মা-বাবা সন্তানের কাছ থেকে অসম্মানিত হন তখন আর সন্তান-সন্তান সে আমার একটাই চাওয়া, পৃথিবীর সব বৃদ্ধাশ্রমগুলো উঠে যাবে। সব মা তার সন্তানদের কাছে সর্বোচ্চ সম্মানে থাকবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, মা চিরন্তন, মায়ের তুলনা হয় না। মা সৃষ্টির নাম। মায়ের দায়িত্ব ইঞ্চি ইঞ্চি করে পালন করতে হয়। এমনটা সন্তানরা পালন না করলেও মা ঠিকই করেন। মাকে সবসময় সোনা-রুপা, হীরা-মুক্তা দিতে হবে এমনটা নয়। মায়ের মুখের হাসিটাই বলে দেবে সন্তানের দেওয়া কোন জিনিসটা ভালো লাগছে।
মা দিবসে, দুনিয়ার সব নারীর জীবন নিরাপদ হবে, এমন প্রতিজ্ঞাও প্রয়োজন। সবার আগে হোক মায়ের প্রতি সম্মান-দায়িত্ব। প্রতি বছরই ক্যালেন্ডার ধরে মা দিবসটি আসে, চলেও যায়। মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য বাস্তবায়ন করার ঘাটতিও আছে ষোল আনার ওপর আঠারো আনা। অনেক মায়ের স্থান হচ্ছে, বৃদ্ধাশ্রমে। সমাজেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা সীমাহীন।
তবে মা দিবসে মায়ের জন্য স্পেশাল কিছু করার চিন্তাও করেন অনেক সন্তান। হোক ক্ষুদ্র উপহার-ওই উপহারের মধ্যে লুকোনা থাক মুঠোভর্তি ভালোবাসা। অনেক দিন ধরে নিজের জন্য কোনো একটা জিনিসের শখ মায়ের। হয়তো একটা বিশেষ শাড়ি কিংবা গয়না।
কিন্তু কিছুতেই নিজে কেনেননি। মুখ ফুটে বলেননি কাউকে। কিন্তু আপনি সন্তান হিসাবে টের পেয়ে কিনে ফেলুন। দেখুন না কেমন চমকে যান প্রিয় মা। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে।