ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা
জাহানারা ইমামের আন্দোলনে তরুণদের নেতৃত্ব দিতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম
শহিদ জননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভবিষ্যৎ প্রজš§গুলোর মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত রাখতে পারলে এ দেশের কল্যাণের জন্য ত্যাগ স্বীকারে ইচ্ছুক মানুষের অভাব হবে না।
শুক্রবার বিকালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘জাহানারা ইমামের আন্দোলনে তরুণদের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় আইটি সেলের সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তপন পালিতের সভাপতিত্বে এবং অনলাইন বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর সহকারী সম্পাদক সুশীল মালাকারের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ব্লগার লেখক মারুফ রসূল।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহিদ সন্তান আসিফ মুনীর, নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সদস্য ড. খন্দকার তানজির মান্নান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ইসমাত জাহান, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট শামস রাশীদ জয়, সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আশেক মাহমুদ সোহান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র ও জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তী।
মূল প্রবন্ধে মারুফ রসূল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মই নব্বইয়ের দশকে শহিদ জননীকে ঘিরে রচনা করেছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল নব্বইয়ের তারুণ্য। এই যে উত্তর প্রজন্মের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের মেলবন্ধন- আমরা যদি ইতিহাসনিষ্ঠ হই, তবে স্বীকার করতেই হবে, এই যুগলবন্দি থেকেই জন্ম নিয়েছিল ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন।
ড. খন্দকার তানজির মান্নান বলেন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ইসমাত জাহান বলেন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যদি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন না করতেন, তাহলে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কট্টরপন্থি দলগুলো এখনকার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী থাকত। শামস রাশীদ জয় বলেন, প্রগতিশীলতা একটি প্রক্রিয়া, একটি চর্চা।
শহীদসন্তান আসিফ মুনীর বলেন, আজ তরুণ প্রজন্মের সেই সব প্রতিনিধিরা শহীদজননীকে নিয়ে আলোচনা করলেন, যারা ১৯৯১-৯২ সালের জাহানার ইমাম ও তার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেননি। কিন্তু আজ দেখছি জাহানারা ইমাম, শাহরিয়ার কবির, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর মত এই আন্দোলনের প্রবীণ নেতারা কিভাবে তরুণদের অনুপ্রাণিত করছেন।
ড. তপন পালিত বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নির্মূল কমিটি। জাহানারা ইমামের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গণআদালতে গোলাম আযমের বিচার করা সম্ভব হয়েছিল। শহীদজননীর মৃত্যুর পর শাহরিয়ার কবির ও কাজী মুকুলের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মূল কমিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ গড়ে তোলার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এখন সেই দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মকে গ্রহণ করতে হবে।